হাওর কেন গুরুত্বপূর্ণ?

হাসান হামিদ

কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বারবার উঠে এসেছে হিজলের কথা। তিনি লিখেছেন,

‘পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;

পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;

পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু‘জনার মনে;

আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।

আমি জন্মেছি সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের হিজল ঘেরা এক গ্রামে। আমার জেলার প্রায় সবটাই বিস্তীর্ণ  হাওরবেষ্টিত বিশাল নিম্নভূমির ভাটি অঞ্চল। এখানকার সবুজ প্রকৃতিজুড়ে খেলা করে অপার সৌন্দর্যের মুগ্ধবিস্ময়। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের প্রকৃতি ও অর্থনীতিতে হাওর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার লেখার আজকের বিষয় সেটাই।

হাওর হলো  সাগরসদৃশ পানির বা জলের বিস্তৃত প্রান্তর। প্রচলিত অর্থে হাওর হলো বন্যা প্রতিরোধের জন্য নদীতীরে নির্মিত মাটির বাঁধের মধ্যে প্রায় গোলাকৃতি নিচুভূমি বা জলাভূমি। তবে হাওর সব সময় নদী তীরবর্তী নির্মিত বাঁধের মধ্যে নাও থাকতে পারে। হাওরের কথা বলতে গেলে সাগরের দৃশ্য মনে ভেসে উঠে। অভিধান ও শব্দের ইতিহাস বলে সাগর শব্দের অপভ্রংশ শব্দ হাওর। কালক্রমে উচ্চারণ বিবর্তনে সাগর থেকে সায়র এবং সায়র থেকে হাওর শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে পণ্ডিতগণ ধারণা করেন।

প্রাচীনযুগে হাওরাঞ্চলের ইতিহাস আমরা খুব একটা খুঁজে পাই না। সেই সময়ে হাওরের অবস্থান কী ছিল তা স্পষ্টভাবে জানা যায়না। তবে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, প্রাচীন কালে বাংলাদেশ বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত ছিল। যেমন- পুন্ড্র, বরেন্দ্র, বঙ্গ, সমতট, হরিকেল, গৌড় ইত্যাদি। তবে এসব জনপদের অবস্থান নিয়ে পন্ডিতদের মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ অনুমান করেন হরিকেল নামে জনপদে সিলেটসহ হাওরাঞ্চলের অবস্থান ছিল। বিখ্যাত পর্যটক মেগাস্তিনিসের খ্রিঃ পূর্ব ৩০২ অব্দে ভারত ভ্রমণের অনন্য দলিল “ইন্ডিকা” গ্রন্থ ও মানচিত্র থেকে জানা যায়, হাওরাঞ্চল বিশাল কামরুপ রাজ্যের অতর্ভূক্ত ছিল। যোগিনীতন্ত্র অনুসারে কামরুপ (বর্তমান আসাম) রাজ্যের এলাকা ছিল দৈর্ঘ্যে ৮০০মাইল এবং প্রস্থ্যে ২৪০ মাইল। বিখ্যাত পরিভ্রাজক হিউ এন সাঙ সম্ভবত ৬৫০ খিষ্টাব্দে এবং ইবনে বতুতা ১৩৩৩ ও ১৩৪৫/৪৬ খিষ্টাব্দে তার ভ্রমন কাহিনী কিতাবুল রেহালা লিখেন। তাতে তিনি হাওরাঞ্চলে প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যে কতোটা মুগ্ধ হয়েছিলেন বা বৈরী আবহাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তার বিবরণ পাওয়া যায়।

আমাদের দেশে ছোট-বড় ৪১৪টি হাওর, জলাশয় ও জলাভূমি রয়েছে। জলমহাল রয়েছে ২৮ হাজার। বিল রয়েছে ছয় হাজার ৩০০। এর মধ্যে হাওরের আয়তন ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। ভাটির দেশ হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জে রয়েছে ১৩৩টি, সিলেটে ৪৩টি, হবিগঞ্জে ৩৮টি, মৌলভীবাজারে ৪টি; কিশোরগঞ্জে ১২২টি, নেত্রকোনায় ৮০টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩টি হাওর রয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিয়দংশ প্রভৃতি জেলার প্রায় পাঁচ হাজার হাওর-বাঁওর, বিল-ঝিল নিয়ে গঠিত হাওরাঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। সে তুলনায় হাওরাঞ্চলের শিক্ষা, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের সরকারের নজর চাহিদার কাছাকাছি নয়। হাওরাঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি, মতান্তরে আরো বেশি। হাওরবাসীর প্রায় ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠী কৃষিকাজ করে। বাকি ১০ ভাগের ৫ ভাগ মৎস্যচাষ আর ৫ ভাগ ব্যবসা, চাকরি ও অন্যান্য কাজে নিয়োজিত।

আমাদের হাওরাঞ্চলে একটি মাত্র ফসল- বোরো। বছরে একটি মাত্র ফসল হলেও বিরল বিচিত্র দেশি জাতের অনেক ধান এখনো এ হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত হয়। বছরে প্রায় তিন লাখ টন ধান উৎপাদন করে দেশের খাদ্য চাহিদা মেটায় হাওরবাসী। হাওর ভাটি বাংলা হচ্ছে এমনই সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, যেখানে ৩৭৩টি হাওরে রয়েছে ০.৭৩ মিলিয়ন হেক্টর চাষযোগ্য জমি যা থেকে বছরে একটি ফসল আবাদ করে উৎপাদন হয়- ৫.২৩ মিলিয়ন টন ধান। বছরের বাকি ছ’ মাস প্রায় অব্যবহৃত থেকে এ বিশাল সম্ভাবনার সুফল থেকে জাতি বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষিবিদদের মতে, দেশে আবাদযোগ্য পতিত জমিসহ উপকূল ও হাওর অঞ্চলের জলাবদ্ধ এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি জমিতে পরিণত করতে পারলে বছরে ৫০ লাখ টন বাড়তি খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব। মতানুযায়ী, দেশের বিস্তীর্ণ জলাবদ্ধ এলাকা চাষের আওতায় আনার পাশাপাশি জলাবদ্ধ সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করা গেলে বছরে আরো ৫ লাখ টন অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। মাননীয় সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এখনই হাওর নিয়ে ভাবুন।

হাওরাঞ্চলের মানুষ একসময় গর্ব করে বলতো, মাছ আর ধান হাওরের প্রাণ। হাওরাঞ্চলের জলরাশিতে পাওয়া যায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নানা জাতের মাছ যেমন- কৈ, সরপুঁটি, পুঁটি, তিতপুঁটি, কাতলা, মাগুর, খৈলসা, বাঁশপাতা, আইড়, টেংরা, বাইম, চিতল, ভেদা, পাবদা, গজার, শোল, মহাশোল, চাপিলা, কাকিলা, বোয়াল, মৃগেল, রুই, কালবাউস প্রভৃতি। বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশে ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে হাওরগুলোতে ১৩০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। তবে গত প্রায় এক দশকে এসব মাছের মধ্যে প্রায় ৬২ প্রজাতি অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। যেমন- বাঘাড়, পিপলা, তিলা শোল, ঘাউড়া, বাচা, বাটা, নান্দিনা, ঘোড়া মুইখ্যা, পাঙাশ, সরপুঁটি, রিটা, শিশর, মহাশোল, একথুটি, বামোশ, রানি, চাকা, গজার, কাশ খাউড়া, কালাবাটা, কালিয়া, ঘইন্যা, শাল বাইম, কুমিরের খিল, গুইজ্জা, চিতল, কানি পাবদা, মধু পাবদা, পাবদা, নেফতানি, ডানকুনি, ঢেলা, বিষতারা, শিলং, গুজি আইড়, ছেপ চেলা ও রায়েক। বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর, সিলেটের চার জেলায় চার লাখ ৭০ হাজার ৫৫৬ হেক্টর হাওর-বিল-জলাশয়, এক হাজার ৯৮৯টি বিল এবং এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৯টি পুকুর রয়েছে। এ সব উৎস থেকে প্রতিবছর এক লাখ ২৩ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়।

শুধু মাছ আর ধান নয়- পাখির জন্য হাওর অভয়ারণ্য এলাকা। শুকনো মৌসুমে বিশেষত শীতকালে দেশের বিরল প্রজাতির বহু পাখির দেখা মিলবে হাওরের বদ্ধ জলাশয়ে। হাওরের হিজলবাগে বসে পাখিদের মিলনমেলা। সুনামগঞ্জের বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ছোট বড় ৫১টি বিলের সমন্বয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওরকে সম্পদ ও সৌন্দর্যের রাণী হিসেবে অভিহিত করা হয়। টাঙ্গুয়ার হাওর পরিযায়ী পাখির জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান। ২০০০ সালের ৬ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘রামসার সাইট’ ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক রামসার কনভেশনে স্বাক্ষর করেন কর্তৃপক্ষ। এতে রামসার তালিকায় বিশ্বের ৫৫২টি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরের নাম উঠে আসে। পরিবেশবাদীদের গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে বিপন্ন প্রায় বিরল প্রজাতির ২ শতাধিক পাখির অভয়াশ্রম এবং বিপন্ন ১৫০ প্রজাতির মাছের সমাগম এ টাঙ্গুয়া হাওরে। টাঙ্গুয়ায় রয়েছে স্তন্যপায়ী দুর্লভ জলজ প্রাণী গাঙ্গেয় ডলফিন (শুশুক), খেঁকশিয়াল, উঁদ, বনরুই, গন্ধগোকুল, জংলি বিড়াল, মেছো বাঘ। আরো রয়েছে- নলখাগড়া, হিজল, করচ, বরুণ, রেইনট্রি, পদ্ম, বুনো গোলাপসহ ২০০ প্রজাতিরও বেশি গাছগাছড়া। যা থেকে জ্বালানি কাঠ, আসবাবপত্রসহ গৃহসামগ্রী ও সৌখিন শোপিস তৈরির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় হয়।

কৃষি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। ঐতিহাসিকদের মতে নব্য প্রস্তর যুগে পশু পালন ও মৎস্য শিকার এবং ফলমূল সংগ্রহ করে খাওয়া থেকে মহিলারা প্রথম কৃষি কাজের সূচনা করে। বেদ ও মহাভারতের বর্ণনায় খ্রিষ্টের জন্মের ৫০০০ বছর পূর্বে বাংলাদেশের পটভূমিতে কৃষি কাজ মানুষের জীবিকা ছিল। আবহমান বাংলার কৃষিকর্ম ঐতিহ্য বহন করে আসছে। তবে ভৌগলিক অবস্থার কারণে হাওরাঞ্চলে ৮০% লোক কৃষিজীবি, কিন্তু শুধু একটি মাত্র উৎপাদিত খাদ্য শস্য ধান এ অঞ্চলের প্রধান শস্য। পলি গঠিত উর্বর এ অঞ্চলে প্রচুর ধান জন্মে। বছরে মাত্র একটি ফসলের উপর কৃষকের সুখ-দঃখ নির্ভর করে শতাব্দির পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে গভীর পানিতে ভাসমান বিভিন্ন জাতের আইশনা, খামা ও লাকী প্রভৃতি আমন ধান এবং পাট, তিল, তিষি ইত্যাদি চাষ করা হত। কালক্রমে বার বার আমন ধান ডুবে গেলে উনবিংশ শতাব্দির পঞ্চাশের দশকে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং ক্রমে অগ্রহায়নের স্থান দখল করে বোর মৌসুমের বোর, টোপা, শাইল ইত্যাদি ধান। কিন্তু তখন উন্নত সেঁচ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মাঠের পর মাঠ খরায় বিরান হয়ে যেত। পরে ১৯৬৫ সাল থেকে পাওয়ার পাম্পে সেঁচ ব্যবস্থা চালুর ফলে দেশে কৃষি কর্মে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে এবং ধীরে ধীরে কৃষিকর্মে উচ্চ ফলনশীল ধান ইরি ৮ এবং ক্রমে চলতি সময় পর্যন্ত ব্রি-ধান ২৮, ২৯ বিভিন্ন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান ফলানোর মাধ্যমে হাওরাঞ্চল খাদ্যের সয়ংসম্পর্ণতা অর্জন করে এবং উৎপাদিত ধানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ধান দ্বারা জাতীয় ঘাটতি পূরণে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু দু;খের বিষয় এত চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে হাওরাঞ্চলের কৃষক জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক হলেও কৃষকের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হল না ।

প্রায় বছরই হাওর অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অকাল বন্যা ফসলকে কৃষকের হৃৎপিন্ড ছিড়ে কেড়ে নিয়ে যায়। কৃষক প্রকৃতির সাথে লড়াই করে পরাভূত হয়ে অসহায়ের মত চেয়ে থাকে আর বন্যার পানি ধুয়ে নেয় কৃষকের অশ্র“জল। একই সাথে বয়ে আসে বিশাল ঋণের বোঝা। চলতে থাকে দুর্বিসহ জীবন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কত কৃষক যে দিন মুজুরে হয়েছে কিংবা রাজপথে ঠেলা গাড়ি চালক বা র্গামেন্ট শ্রমিক হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তার হিসাব কেউ রাখেনা।

হাওর বাঁচলেই বাঁচবে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল বিশাল জনগোষ্ঠী, তাদের জীবন ও জীবিকা। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু নানা বিধ কারণে তা হচ্ছেনা। আমরা হাওর রক্ষায় কোন উদাসীনতা আশা করি না। সরকার ও জনগণ মিলে হাওর রক্ষায় সুব্যবস্থা  নিশ্চিত করা দরকার। লেখাটি শুরু করেছিলাম হিজল নিয়ে কবিতা দিয়ে। শেষ করছি হিজল ফুলের কথা দিয়ে। হিজল ফুল সাধারণত সন্ধ্যার পর ফুটতে শুরু করে। রাত যত বাড়তে থাকে, ফুলের সমারোহ ততই বাড়ে। সকালে আলো ফোটার মধ্য দিয়েই ঝরতে থাকে হিজলের ফুল। কবি জীবনানন্দ দাশ সম্ভবত হিজল ফোটার এই মাদকতাপূর্ণ মিষ্টি ঘ্রাণের স্মৃতি নিয়েই লিখেছেন তার কবিতার চরণ,

আজ তারা কই সব? ওখানে হিজল গাছ ছিল এক

পুকুরের জলে বহুদিন মুখ দেখে গেছে তার;

তারপর কি যে তার মনে হলো কবে

কখন সে ঝ‘রে গেল, কখন ফুরাল,

আহা-চলে গেল কবে যে নিরবে, তাও আর জানি নাকো’

প্রকাশিত পত্রিকা- দৈনিক মানবকণ্ঠ  ১৫/০২/২০১৮

হাওর কেন গুরুত্বপূর্ণ?
Scroll to top