হাসান হামিদ
বেহুলা লক্ষীন্দরের পৌরাণিক কাহিনী যারা পড়েছেন তারা জানেন, চাঁদ সওদাগর বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে লৌহিত্য সাগর পাড়ি দিয়ে চম্পক নগর থেকে উজানি নগর যেতেন। বেশিরভাগ পণ্ডিত মনে করেন, আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে হাওরাঞ্চলেই ছিল লৌহিত্য সাগরের বিশাল জলরাশি। দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে আছড়িয়ে পড়তো লৌহিত্য সাগরের উত্তাল ঢেউ। এখনো বর্ষায় যখন বান ডাকে, হু হু করে বাড়ে হাওরের পানি, তুমুল বাতাসের চোটে ঢেউ আছড়ে পড়ে হাওরের দ্বীপের মতো গ্রামগুলোর বুকে। চারদিকে কেবল পানি। জনপদগুলোকে ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। ভরা বর্ষায় গ্রামগুলো প্রায় ডুবু ডুবু। দক্ষিণা বাতাস শন শন শব্দ করে ছুটে চলে হিমালয়ের দিকে, তার প্রিয়তমা মালতির দেশে। তখন সঙ্গে বড় বড় ঢেউ মাথায় সাদা পাগড়ি পরে পাগলা হাতির মতো ছুটে চলে। আর বৈশাখে পাকা ধানের সোনালি রঙে সারা হাওরের মাঠ ছেয়ে যায়। দেখে কে বলবে এখানে কতো গভীর হাহাকার বাস করেছে কিছুদিন আগেও! আর শুধু এক-দুইবার হাওরাঞ্চল দেখে হাওরের সৌন্দর্য সম্পর্কে ধারনা করা কঠিন। হাওরবাসী শুধু জানে হাওর কত বিস্ময়ের বিরাট রাজত্ব!
হাওরের অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক গুরুত্ব উপলব্দি করে সরকার এ অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু সেই উদ্যোগের বাস্তবতা কেমন তা প্রশ্ন রাখে অনেক সময়। কয়েক বছর আগেই সরকার হাওর এলাকার জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে আমরা জেনেছিলাম। এগুলোর মধ্যে ছিল পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি উন্নয়ন, মৎস্য উন্নয়ন, বিদ্যুৎ শক্তি, বন, খনিজসম্পদ, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদ, জীববৈচিত্র্য এবং জলাভূমি ব্যবস্থাপনা নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, পশুসম্পদ উন্নয়ন শিল্প শিক্ষার, সামাজিক সুবিধাদি, মুক্তা চাষ, আবাসন, পর্যটন ইত্যাদি। বলা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট প্রধান প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্থা দ্বারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে এবং জরুরিভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু করা হবে। কিন্তু মনে হচ্ছে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের কার্যক্রম কচ্ছপগতির। অথবা অন্যান্য এলাকার মতো চিন্তা ভাবনা নিয়ে এখানে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করলেও সেটা আলোর মুখ দেখবে না। তাহলে কি করতে হবে? হাওরের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
তবে সুখের কথা হলো, গত সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাবিটা নীতিমালায় বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির বিষয়ে জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পত্রিকার খবর পড়ে জানতে পেরেছি, সুনামগঞ্জের আগামী বোরো ফসলরক্ষায় ৮০০ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাথমিকভাবে ৬৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। পত্রিকার খবরে পড়েছি, সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ঠেকাতে প্রকল্প তৈরি করার আগেই প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই ঠিকভাবে করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক নেতা, গণমাধ্যমকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা। তাদের এই যৌক্তিক দাবি কর্তৃপক্ষ যেনো আমলে নেয়। একথা সত্য যে, কোথায় বাঁধ দিলে হাওরের ফসল অকাল বন্যা থেকে রক্ষা হবে বা কতটুকু উচ্চতায় বাঁধ হওয়া প্রয়োজন, সেটি বিশেষজ্ঞরা যেমন বুঝেন, স্থানীয় কৃষকরাও এর ধারণা দিতে পারেন। এজন্য স্থানীয় কৃষকদের যুক্ত করে এই কাজ করা উচিত। তাহলে বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতার সাথে তত্ত্ব যোগ হবে, ফলাফল ভালো আসবে।
বাঁধ নির্মাণের আগে প্রি-ওয়ার্ক সার্ভের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জেনেছি। হাওরবাসী আশা করে প্রকল্প বাছাই ও পিআইসি গঠনের কাজ সময় মতো শেষ হবে। আশা করি, এ বছর এ নিয়ে দুর্নীতি হবে না। আমরা জানি, প্রত্যেক বছর হাওরের বাঁধ নিয়ে পুকুরচুরি হয়। ভাগ্যের কারণে সেখানের কৃষক কোনো বছর এক-তৃতীয়াংশ, কোনো বছর অর্ধেক ফসল ঘরে তুলতে পারত। অথবা ধান পেকে তলিয়ে গেলে নৌকার মাধ্যমে শতকরা ত্রিশ থেকে চল্লিশ ভাগ ধান তুলতে পারত। তাই খেয়ে না খেয়ে তাদের জীবন চলে যেত। কিন্তু ২০১৭ সালে ধান পাকার পূর্বেই কাঁচা ধান তলিয়ে যায়। ফলে নৌকা দিয়ে ৩০-৪০ ভাগ ধানও তোলা সম্ভব হয়নি। এজন্য ভাটি অঞ্চলে নেমে আসে মহাবিপর্যয়। যার একমাত্র কারণ বাঁধের কাজ একেবারেই না হওয়া। যদিও সেই সময়ের পানিসম্পদ মন্ত্রী এর জন্য বন্যাকে দায়ী করেছিলেন। বাস্তবতা হলো, হাওরের বাঁধের জন্য যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল তখন তার ৬০ ভাগ কাজ হলেও হাওরের ফসল তলিয়ে যেতে ন্যূনতম বিশ দিন বিলম্ব হতো। ২০১৭ সালে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের (ডিডিএম) জানিয়েছিল, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ফসলহানি, মাছ ও প্রাণিসম্পদ, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট এবং কর্মঘণ্টার যে ক্ষতি, তার আর্থিক মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালে তলিয়ে যায় হাওরের ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ধান। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ছয় জেলায় পরিবারের সংখ্যা ২৮ লাখ ৯৭ হাজার। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বন্যায় নানাভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি বা ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার।
হাওর এলাকার মানুষ যাদের হাওরে জন্ম এবং হাওরে বসবাস করে তাদের কী সুবিধা-অসুবিধা আছে কী করলে কী সুবিধা হবে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যারা হাওরকে চিনে জানে এ ধরনের লোককে হাওর পরিকল্পনার সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। কৃষি খাতে বাজেট বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়নই কৃষকের ভাগ্য উন্ময়নে সহায়ক হবে। বিনামূল্যে কীটনাশক প্রদান, ভর্তুকি মূল্যে সার, তেল ও উন্মত মানের বীজ প্রদান করা এবং কৃষি যন্ত্র পাতির মূল্য হ্রাস করা। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, জমিতে সুষম সারের ব্যবহার, সেচের পানির অপচয় রোধ ইত্যাদি বিষয়ে কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। অকাল বন্যার ক্ষতি থেকে ফসল রক্ষার জন্য নদী খনন ও নদীর বাঁক কেটে সোজাকরণ ও স্থান বিশেষে স্লুইস গেটসহ প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা। বীজবোনা থেকে শুরু করে হাওরে ধান পাকা পর্যন্ত কৃষকের মোটা অংকের টাকা খরচ হয়। কিন্তু রাস্তাঘাটের অভাবে পাকা ধান কেটে বাড়ি আনতে পারে না। অতি বৃষ্টিতে বা বন্যা হলে জমির পাকা ফসল জমিতে নষ্ট হয়। সে মর্মে হাওর অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে ডুবুরাস্তা (সাব মার্সেবল) নির্মাণ করা যা একটি হাওরকে কয়েক ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এ অবস্থায় যাতায়াত সুবিধাসহ ফসল ঘরে তোলা সহজ হবে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে অতি বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে না পারায় ভিজা ধান অঙ্কুরিত হয়ে ৬০-৭০% ক্ষতি হয়ে যায়। এ ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য প্রতি ওয়ার্ডে সমবায় ভিত্তিতে সরকারি খরচে একটি করে অটো রাইসমিল স্থাপন করলে অতি বৃষ্টির ক্ষতি থেকে ধান রক্ষা পাবে।
পরিবহন ও যোগাযোগ উন্নয়নের চালিকাশক্তি কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের দিকটি বিবেচনায় রেখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ফসল রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে হাওর এলাকায় উন্নতি হতে পারে কিন্তু বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রচুর ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ঢেউয়ের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হবে। এছাড়া উজানের স্রোত বন্ধ হয়ে জমির উর্বরতা হ্রাস পাবে। ফলে ফসলহানি ঘটে উন্নয়ন ব্যাহত হাতে পারে। এক্ষেত্রে উড়াল সেতু নির্মাণ করে এক উপজেলার সঙ্গে অন্য উপজেলার যোগাযোগ ও শহর থেকে উড়াল সেতুর মধ্যে যোগযোগ করলে পরিবহন ও যোগাযোগে ব্যাপক উন্নতি হবে।
মৎস্যসম্পদ উন্নয়নের জন্য জাল যার জলা তার- এ উপপাদ্যানুসারে প্রকৃত জেলেদের মধ্যে জলমহাল ইজারা দিতে হবে। মৎস্য সমবায় সমিতিগুলোতে প্রতীকী নাম ব্যবহার করে এক শ্রেণির লোক জলমহাল ইজারা নিয়ে ফুলবাবু সেজে জলমহালের সুবিধা ভোগ করে। এ লোকগুলো অতিশয় চালাক। অর্থ প্রদান করে জলমহালের মালিক বনে যায়। এতে প্রকৃত জেলেরা লভাংশ থেকে বঞ্চিত হন। বিল বা জলাশয় শুকিয়ে মাছধরা বন্ধ করতে হবে এবং বিষয়টি আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাছের পোনা এবং মা মাছ নিধন বন্ধ করতে হবে । বৈশাখ মাস থেকে আষাঢ় মাস এই তিন মাস প্রতি বছর মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে এতে অনেকাংশে মাছের বংশবিস্তার বৃদ্ধি পাবে। বেশি করে মাছের অভয়ারণ্য স্থাপন করতে হবে। আমাদের দেশের মৎস্য আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই, এটি জোরদার করতে হবে। মৎস্য উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদ শামুক ঝিনুক রক্ষা করতে হবে। মুরগির খামারের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য যখন তখন বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি নির্মাণকরণে ফসলের জমি তথা বৃক্ষের নিধনের প্রয়োজন হয়, সুতরাং জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে হবে।
বাড়ির আঙিনায় এবং রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণ করতে হবে এবং খাসজমি বাছাই করে মিঠাপানি সহনশীল গাছ যেমন- বট, হিজল, রেন্ট্রি নল, করুই, মেড়া, আম, জাম, নলখাগরা, মটকা ছাইল্লেয়া ইত্যাদি অনেক প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আশঙ্কজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ফসলি জমির পরিমাণ কমে আসছে। এ বিষয়ে আইন পাশ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমান সরকার সব গ্র্রামকে নগরায়ন করার কথা ভাবছে। গ্রামের অবকাঠামো পরিবর্তন করে পরিকল্পিতভাবে ৪র্থতলা করে শহরের সব সুবিধা গ্রামে পোঁছে দেবেন। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। দ্রুত এর বাস্তবায়ন করতে হবে।
হাওরের প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ জীবিকার জন্য কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। অথচ এই হাওরের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। জিডিপির ২ শতাংশ আসে হাওরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে। হাওরের সঙ্গে ওই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবন-জীবিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই অঞ্চলের উন্নয়ন কৌশল ভিন্ন হওয়া প্রয়োজন। ২০১৯ সালের মার্চ মাসের ৩০ তারিখ জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘হাওরের সুশাসন ব্যবস্থা এবং হাওরবাসীদের অধিকার’ শীর্ষক সেমিনার হয়েছিল। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেদিন আমরা জানতে পারি, হাওর অঞ্চলের বাঁধ ব্যবস্থাপনা, হাওরবাসীর জীবনপ্রণালি ও অধিকার’ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে এএলআরডি। আর ওইদিনের সেমিনারে এ সংক্রান্ত গবেষণার প্রতিবেদন ও ফলাফলের ওপর ভিক্তি করে গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, সেই প্রবন্ধে তিনি হাওরের দুর্যোগের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছিলেন।
কোন বছর হাওরে বন্যা হবে আর কোন বছর হবে না তার কিন্তু ঠিক নেই। এর হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হলে স্থায়ী সমাধান খুঁজতে হবে। পাউবো বা পিআইসির মাধ্যমে যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলো আসলে অস্থায়ী। হাওরের সব জায়গায় না হলেও কিছু জায়গায় স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। একই সঙ্গে উজান থেকে আসা ঢলের পানি যাতে নদী ও হাওর ধারণ করতে পারে, সে জন্য নদী ও বিল খনন করতে হবে। নদীর নাব্যতা বাড়লে বন্যার প্রকোপ কমে যাবে। আর বর্তমানে হাওরে যেসব ধান চাষ করা হয়, তা দীর্ঘমেয়াদি। এমনকি কোনো কোনোটিতে পাঁচ–ছয় মাস পর্যন্ত লেগে যায়। এখন হাওরের উপযোগী স্বল্পমেয়াদি ধান উদ্ভাবন করতে হবে। আমরা জানি, বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা খুবই মেধাবী। তারা বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। গবেষণা সহায়তা পেলে হাওরের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খায়, এ রকম ধানও উদ্ভাবন তারা করতে পারবেন বলে আমার ধারণা। এর জন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা এবং এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত বরাদ্দ।
চীনের দুঃখ বলা হতো হুয়াং হো নদীকে। প্রাচীন চীনে প্রায়ই হুয়াং হো নদী ছাপিয়ে উঠে সবকিছু বন্যায় ভাসিয়ে দিত বলে এর এমন নাম হয়েছিল। আমরা জানি, ছাব্বিশ বার এই নদীর গতিপথ বদল হয়েছিল। আর প্রতিবারই চীনের জনগণের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা। কিন্তু ১৯৪৯ সালে সেখানে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের চীন সরকার হুয়াং হো নদীর উজানের দিকে এবং মধ্য এলাকা বরাবর মৌলিক গুরুত্বসম্পন্ন কতগুলো জল সংরক্ষণ প্রকল্প নির্মাণ করে এবং ভাটির দিকে নদীর পাড়ের বেড়িবাঁধগুলো আরও মজবুত করে এবং নদীর তীরবর্তী জনসাধারণের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। সরকার হাওর এলাকার দিকে বাড়তি একটু নজর দিলে হাওরের একটা স্থায়ী সমাধান আসবে।
প্রকাশিত পত্রিকা- দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯