হাসান হামিদ
একটি সেমিনারে অংশ নিতে গত বছর রাজশাহী গিয়েছিলাম। ট্রেনে যাবার পথে ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ (Witness to Surrender) বইটা পড়তে পড়তে গেছি। সেই বইয়ে স্বাধীনতা পুর্ববর্তী সময়কার আমাদের দেশের সাধারণের আর্থ সামাজিক অবস্থার কিছু চিত্র ওঠে এসেছে। যদিও বইটার কতটা নেব না নেব তা নিয়ে বিতর্ক আছে। লেখক সিদ্দিক সালিক, যিনি তৎকালীন পাকিস্থানি মিলিটারির একজন মেজর ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর হাতে যুদ্ধবন্দি হন। ১৯৭৭ সালে বইটি প্রথম প্রকাশ হয়। সেখানে এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, পথে যেতে যেতে গাড়ি থেকে তিনি দেখেছেন মানুষের মলিন মুখ, পরনে ছেঁড়া কাপড়, পায়ে স্যান্ডেল নাই।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৭০ ডলার। এ পরিমাণ আয় নিয়ে বিশ্বের একেবারেই গরিব দেশের তালিকায় জায়গা হয় বাংলাদেশের। তখন বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। ফাঁকা রাজকোষসহ নানা সংকটে নিমজ্জিত দেশটি তখন সাত কোটি মানুষ নিয়ে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ হলিস বি. চেনারিকে তখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, মানসম্পন্ন মাথাপিছু আয়ের তালিকায় যেতে বাংলাদেশের কতদিন লাগবে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ১৯৬৫ সালকে ভিত্তি ধরে মাথাপিছু আয় ৮০০ ডলারে বা ১৯৭৩ সালকে ভিত্তি ধরে ৯০০ ডলারে পৌঁছাতে বাংলাদেশের ১২৫ বছর লাগবে। এই হিসাব বাংলাদেশ ভুল প্রমাণ করেছে অনেক আগেই। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন প্রায় দুই হাজার ডলার। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ ধরা হয়েছে। আর মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৯০৯ ডলার।
আজ থেকে ৪৮ বছর আগে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার সময়ে বাংলাদেশের যে ভঙ্গুর অবস্থা ছিল, তাতে এত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ উন্নয়নের এই স্তরে পৌঁছাবে, তা কেউ ভাবতে পারেনি। নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ‘ভারত : উন্নয়ন ও বঞ্চনা’ গ্রন্থে লিখেছেন, বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাবে, এ কথা তখন কেউ ভাবেনি। দেশ স্বাধীনের পর অনেকেই তখন বলেছিলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কেউ কেউ তাকে ‘বাস্কেট কেস’ বলে খরচের খাতায় ফেলে দিয়ে বলেছিলেন, এই দেশকে কোনো অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়াই উচিত নয়। কারণ দেশটি জনসংখ্যা বিস্ম্ফোরণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্য উৎপাদন করে উঠতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ অনেকের সেই ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে।
ভাবতে খুব ভালো লাগ, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হবার পথে হাঁটছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ। ব্যাপারটি খুব সাধারণ নয়।
এর আগে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংক এ দেশকে ‘নিম্ন’ থেকে ‘নিম্ন মধ্যম’ আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড পায় বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশে এসে ঘোষণা দেন, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী দক্ষতা সারাবিশ্বের জন্য শিক্ষণীয়।
বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল ২৯৮ কোটি টাকা। আমদানি ব্যয় ছিল ৭৩২ কোটি টাকা। এরপর যত দিন গেছে, শিল্পায়নের ফলে আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রফতানি আয়। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৫৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। রফতানি করেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। পাশাপাশি আরও ৬ বিলিয়ন ডলারের সেবা রফতানি করেছে। রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে বহুগুণ। রেমিট্যান্স আসছে বছরে ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানব উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়েছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। পাকিস্তানের ছিল ৫৩ বছর। ভারতের ছিল ৪৮ বছর। বাংলাদেশ তাদের পেছনে ফেলেছে। বাংলাদেশের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। ভারত ও পাকিস্তানের গড় আয়ু যথাক্রমে ৬৯ ও ৬৬ বছর। পাঁচ বছরের কম শিশু মৃত্যুহারেও একসময় বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল। ২০১৬ সালের হিসাবে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণের পর প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু ঘটে। পাকিস্তানে এ সংখ্যা ৭৯। নবজাতক মৃত্যুর হারও বাংলাদেশ তাদের চেয়ে বেশি হারে কমাতে পেরেছে। বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার নবজাতকের মধ্যে মারা যায় ২৮ জন। পাকিস্তানে এ সংখ্যা ৬৪ আর ভারতে ৩৫ শিশু। বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার একসময় অনেক বেশি ছিল। এ ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থী। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এ হার ৭২ শতাংশ। বাংলাদেশ ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। বাংলাদেশের মতো এত দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারেনি কোনো দেশ। ২০১৬ সালের হিসাবে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। পাকিস্তানে এ হার ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ভঙ্গুর অবকাঠামো, খাদ্য সংকট, শূন্য রাজকোষ আর বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়াই পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নে হিমশিম খেতে থাকে সরকার। তবুও ভেঙে পড়েননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি জাতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখান। পাকিস্তানি সেনারা যুদ্ধের সময় পুড়িয়ে দেয় টাকা-পয়সা। ধ্বংস করে শিল্পকারখানা।
আর সেই বাংলাদেশে এখন ৫৭টি ব্যাংক ও ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। রয়েছে শতাধিক বীমা কোম্পানি। শিল্প উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। শূন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ এখন ৩২ বিলিয়ন ডলার। পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার কারণেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো অবকাঠামো নির্মাণের সাহস পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির আকার দাঁড়িয়েছে ৩০০ বিলিয়ন ডলারে, যা এখন বিশ্বের ৩০তম। স্বাধীনতার সময় আলো বলতে কেরোসিন পুড়িয়ে টিমটিমে জ্বলা কুপির আলোই বুঝত মানুষ। এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত দেশের ৯০ শতাংশ এলাকা। বিশ্বের অনেক দেশ ও বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করছে। অনেকে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে। ইস্পাত শিল্প, গাড়ি সংযোজন শিল্পের মতো ভারী শিল্প হচ্ছে দেশে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়ান বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ পরপর চারটি শস্য উৎপাদনে মার খায়। ১৯৭১-৭২ সালে আমন উৎপাদন ১৯৬৯-৭০-এর তুলনায় ১৯ শতাংশ কম হয়। প্রয়োজনীয় বীজ, সার, উপকরণের অভাবে বাহাত্তরে বোরো উৎপাদন আগের বছরের চেয়েও ২০ ভাগ কমে যায়। ১৯৭২-৭৩-এ স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম খরায় আউশ ও আমন উৎপাদন মার খায়। ১৯৬৯-৭০ সালে যেখানে ২৯ দশমিক ৬৩ লাখ টন আউশ হয়েছিল, ‘৭২-৭৩-এ তা নামে ২২ দশমিক ৭৩ লাখ টনে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম হু-হু করে বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে লবণ, তেলসহ অন্য নিত্যপণ্যের দামও। বিশ্ববাজারেও ওই সময় খাদ্যপণ্য সংকট দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যসহ তেলের দর বেড়ে যায়। সরকার বাধ্য হয় অন্য দেশের কাছে হাত পাততে। সেই বাংলাদেশে এখন উদ্বৃত্ত চাল উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। কেবল খাদ্যশস্য উৎপাদনই নয়, মাছ উৎপাদনেও বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয় শীর্ষস্থানে রয়েছে। গম ও ভুট্টার বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বর্তমান সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবক’টি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লক্ষ এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লক্ষে উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। ৩-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
কৃষিখাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৭ টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ড. মাকসুদ করেছেন ৩টা। তার এই অনন্য অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ঔষুধ, ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য শিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ঔষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের আইটি শিল্প ১০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় ছাড়িয়ে গেছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছিল না। শিক্ষার হার ছিল খুবই কম। অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত। সেই অবস্থায় আজকের বাংলাদেশকে চিন্তা করা অসম্ভব ছিল। এটা সম্ভব হয়েছে কৃষিতে বিপ্লব ও শিল্পে রূপান্তরের মাধ্যমে। তৈরি পোশাক ও নির্মাণের মতো কিছু খাত ব্যাপক সম্প্রসারিত হয়েছে। অন্যদিকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি সফল হয়েছে। স্থানীয় উদ্ভাবনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আয়ুস্কাল বেড়েছে এবং শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে। বেড়েছে স্কুলে যাওয়ার হারও। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন ও শ্রমশক্তিতে তাদের অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে। সামাজিক অনেক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়ের ব্যবধান কমে এসেছে; যা স্বাধীনতার সময় অভাবনীয় ছিল, তা এখন বাস্তবতা।
আমি বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। এই দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৪৮ বছরের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করতে পেরেছে। একথা ভাবতে খুব ভালো লাগে, আমাদের দেশটি যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ।
এটা সত্য, এই দেশে রয়েছে নানামুখী সমস্যা। এই সমস্যা একদিনে দূর হবে না। তবে আমরা স্বপ্ন দেখি সেই সুন্দর সকালের, যখন বাংলাদেশকে পাবো স্বপ্নের সমান কিংবা তারচেয়ে আরো বিশাল করে।
প্রকাশিত পত্রিকা- দৈনিক দেশকাল, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯