সুন্দর, তুমি চক্ষু ভরিয়া এনেছো অশ্রুজল

হাসান হামিদ

আমার সাথে যারা যোগাযোগ করেন প্রতিনিয়ত তারা প্রায় সকলেই জানেন, আমি মন খারাপ না করেই বত্রিশ বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে আছি। আমি খুব আশাবাদী মানুষ। সমস্যাকে কাজ হিসেবে নিই এবং খুব সহজে কোনো কিছুর জন্য মন খারাপ করি না। কিন্তু গত কয়েকদিন যাবত আমার ভীষণ মন খারাপ। হাওরপাড়ে আমার স্বজনেরা থাকেন। পরপর তিনবারের বন্যায় এদের না থাকার মাঝেও যা ছিল, তাও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রথম দফার পর দ্বিতীয় দফায় হওয়া বন্যার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই তৃতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়েছে হাওরকন্যা সুনামগঞ্জ। খবর নিয়ে জেনেছি, পানি আরও বাড়ছে। আবারও প্লাবিত হচ্ছে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। সেই এলাকার মানুষের করোনার সাথে শুধু নয়, এপ্রিলের পর থেকে লড়তে হচ্ছে বন্যার সাথেও। এ লড়াই হাওর সভ্যতার মানুষের একেবারে অপরিচিত তা নয়। কিন্তু অতীতে কখনো দফায় দফায় এমন দুর্ভোগে পড়েনি কেউ। সব মিলিয়ে হাওরের মানুষের বসবাস এখন প্রতিনিয়ত হাহাকারের সাথে। সামনে কী হবে সেই ধারণা কারো নেই। অনিশ্চিত এক আগাম অন্ধকারের আশংখায় বিপন্ন এখন সেখানকার মানুষের জীবনযাপনের সব আয়োজন।

অথচ হাওর থেকে উঠে আসা অনেক উপাদান কিন্তু দেশেকে নির্ভারে সহায়তা করে। খারাপ সময়গুলোতে রাষ্ট্রপক্ষ হাওরকে যা দেয়, সুষ্ঠু তদারকির অভাবে সঠিক জায়গায় বেশিরভাগ সময়ই সেসব পৌঁছায় না। কাগজ-কলমে করা জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান বাস্তবতার একটু দূরেই বাস করে। ভোক্তভুগীদের সাথে কথা বললে সেটি আরও পরিষ্কার হয়ে যায় মূহুর্তেই।

খবরর কাগজ পড়ে জেনেছি, এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের ২৫টি জেলা বন্যা কবলিত। এই বন্যায় এ পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছেন ২৫ জন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা নগদ ও ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল দেয়া হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে শুরু হয়েছে ত্রাণ তৎপরতা। কিন্তু সেই ত্রাণ ঠিকভাবে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছাবে কিনা সেই প্রশ্ন থেকে যায়।

হাওরে মানুষগুলো দীর্ঘ সময় ধরে পানিবন্ধী। সেখানকার মানুষ ও তাদের গৃহপালিত পশুদের অবস্থা একবার চোখ বুজে ভাবলেই বুঝতে পারা যায়! বন্যার পানির তোড়ে অনেক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। সেখানকার গ্রামগুলো এমনভাবে প্লাবিত হয়েছে যে নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার জায়গাও নেই। কয়েক দিন ধরে আবার পানি বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে এইসব পানিবন্দী মানুষ। বন্যার পানিতে সকল নলকূপ ডুবে গেছে। এজন্য বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ঘরে চাল নেই, চুলাও ডুবে গেছে। লাকড়ি নেই। কী খাবে এরা?  ক্ষুধার্ত একটা শিশুর কান্না কীভাবে সইবে সেখানকার মা-বাবা?

সুনামগঞ্জে এর আগে দুই দফা বন্যাকবলিত হয়েছে। এখন আবার।  আর বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় তারা এখন রয়েছে চরম দুর্ভোগে। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে বন্যায় ১ লাখ ৮ হাজার ১২৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাছের খামারিরা। ক্ষতি হয়েছে রাস্তাঘাটের। আমাদের মনে আছে, ২০১৭ সালের বন্যায় ৬৬২ কিলোমিটার রাস্তা এবং ১৩৩ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত ও নষ্ট হয়েছিল। মৎস্য খাতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল। এবারও হচ্ছে। আর বেশিরভাগ মানুষই এখন খাবার সংকটে ভুগে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাস দিয়েছিল ২০ জুলাইয়ের পর তিন-চারদিন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আবারও বন্যা হতে পারে। সেই পূর্বাভাস সাধারণ মানুষ জানে না। আর দুই একদিন আগে পূর্বাভাস দিয়েও লাভ নেই। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বর্ষণ হবে এটা আবহাওয়া অধিদপ্তর অনেক আগেই জানে। আমাদের কারো কাজে সমন্বয় নেই। তাই সময় গেলে সাধনে লাগে সবাই। তাতে সাধন সাধ্যের বাইরে চলে যায়।

পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় ২৫ জুন। এর সপ্তাহখানেক পর পরিস্থিতির যখন উন্নতি হচ্ছিল, তখন ১০ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দেয়। এতে জেলার সব কটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় লোকজন ভোগান্তিতে পড়ে। চারদিকে পানি। ঘরে খাবার নেই। এসময় রোজগার বন্ধ হওয়াতে অন্য বছর গ্রাম ছাড়ে সেখানকার পুরুষরা। কিন্তু এবার করোনার কারণে সবাই বাড়িতে কর্মহীন অবস্থায় অনেক দিন ধরে। এখন ঢেউয়ে ঘর-বাড়ি ভাঙছে অসহায় সুনামগঞ্জের সেইসব মানুষের।

ঘরে পানি উঠছে, কেউ মাচায় আশ্রয় নিয়েছে, কেউ অন্যের ঘরে থাকে। ঢেউয়ে কারো কারো ভিটা-মাটি ভেঙে যাওয়ায় ঘর হেলে গেছে; না হয় পড়ে গেছে। এখনো সরকারের দায়িত্বশীলদের তেমন কার্যক্রম নেই। কার্যক্রম যা আছে, তা খুব সীমিত। আবার ত্রাণ যারা পাবার, তারা না পেয়ে সরকারি দলের লোকেরা পায়। সেই ত্রাণ সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে ভাগ করালেও সঠিক ভাবে সঠিক মানুষের কাছে কেন জানি তা পৌঁছে না। আমাদের গ্রামের এক লোক আমাকে বলেছেন, তার বয়স একশো পেরিয়ে গেলেও তিনি বয়স্ক ভাতা পান না; অথচ সাতচল্লিশ বছর বয়সেও সেখানে কয়েকজন বয়স্ক ভাতা পান। আর এইসব ব্যাপার আমাদের দেশে এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটাই লজ্জা। আর হাওরে বন্যায় না খেয়ে থাকা, আধ পেটে থাকা এই মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো বলবেন, তেমন বিপর্যয় আসেনি; সব ঠিকঠাকই আছে।

আমি সুনামগঞ্জ জেলার হাওরপাড়ের এক গ্রামে জন্মেছি। সেখানে আশেপাশের সব গ্রামেই ছোটবেলায় দেখেছি, হাওরাঞ্চলে বর্ষা আসার সময় আগে বছর বছর আগাম বাড়ী-ঘর বাঁধা হত। কেউ কেউ বলেছেন, এবার আগাম পানি চলে আসায় অসুবিধা হয়েছে বাড়ি বাঁধায়। হাওর থেকে চাইল্লা বন এনে বাড়ি বাঁধা সম্ভব হয়নি। আফালের ঢেউ থেকে বাড়ি-ঘর রক্ষার কোন ব্যবস্থাও হয়নি। আমার এলাকায় ধর্মপাশা-মধ্যনগরের সব গ্রামের এই অবস্থা। আর এই অবস্থায় এমন উচ্চতর পানিতে দশ মিনিট বাতাস হলে হাওরঞ্চলের অনেক বাড়ী-ঘর পানিতে মিশে যাবে,  সেটা জানা কথা। করোনার কারণে কাজকর্মহীন মানুষগুলো বন্যার প্রকোপে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। ঘর বাড়ি হারিয়ে, খাবার অভাবে এখন দিশেহারা সবাই।

আমাদের দেশে হাওর এলাকায় প্রধান প্রধান দুর্যোগ হল বন্যা, বজ্রপাত, উচ্চ মাত্রার ঢেউ এসব। গত কয়েক বছর ধরে হাওর এলাকায় ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে। বন্যা যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাই একে পুরোপুরিভাবে আমরা দমিয়ে ফেলতে বা প্রতিরোধ করতে পারবো না। কিন্তু দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সঠিক পদক্ষেপ ও সহায়তা এর ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ২০১৭ সাল থেকে অতি মাত্রায় বৃষ্টি হচ্ছে। এটাকে পিরিয়ডকালীন বিবেচনা করে সব পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে অসহায় মানুষগুলোর কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে।

আমাদের এখানে হওয়া বন্যাকে প্রায় সময়ই বলা হয়, আকস্মিক বন্যা। আর ঘন ঘন বন্যা হওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এটা মোটামুটি সবাই এখন জানি। বন্যা অনেকাংশেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। আবার আমাদের এখানে সেটি হয় মওসুমভিত্তিক। এজন্য বন্যা হবার আগাম খবর আমরা চাইলে আগেই জানতে ও জানাতে পারি। এজন্য আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, আবহাওয়া অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট এগুলোর সমন্বয়ে একটি কার্যকর পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করতে হবে।

কার্যত শব্দটি এজন্য বলছি, আমরা লক্ষ করি সরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি পান, তারা সেখানে কাজকে কেবলই চাকরি মনে করেন (সবাই না, তবে বেশিরভাগ)। নির্ধারিত সময় ডিউটি করে মাস শেষে বেতন, বছর বছর গ্রেড নিয়ে আন্দোলন এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বেশিরভাগ সরকারি কর্মচারী। আমরা কখনো একজন সরকারি চাকরিজীবীকে তার কাজ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখি না; দুয়েকজন ব্যতিক্রম পাওয়া যায় অবশ্য।

সরকারি চাকরিজীবিরা উপর থেকে আসা একটা অফিস আদেশ কোনো রকম পালন করেই তার দায়িত্ব শেষ মনে করেন। সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে সৎ একজন কলেজ শিক্ষকও মাসে বারোদিন ক্লাসে ছাত্রদের পড়িয়েই তার দায়িত্ব শেষ মনে করেন। সারাজীবন শিক্ষা নিয়ে কাজ করলেও শিক্ষা নিয়ে তার কোনো গবেষণা, চিন্তা থাকে না। আমাদের কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে বেশিরভাগ কৃষকেরই দেখা হয় না। পশুপালন কর্মকর্তা বা আরও যারা আছেন সবার একই অবস্থা। কিন্তু এভাবে একটা দেশ কতটুকু এগিয়ে যাবে? দেশের চালিকাশক্তি প্রতিনিয়ত যারা বাড়িয়ে নিতে কাজ করেন, যাদের কারণে আমরা চকচকে আগামীর স্বপ্ন দেখি তারা বেশিরভাগ উঠে আসেন বেসরকারি খাত থেকে।

তো যাই হোক, আমি বলতে চাচ্ছি, বন্যা আসলে আকস্মিক হয় না; জানাতে দেরি হয় বা জানানো হয় না বলেই আমাদের কাছে এটা আকস্মিক বন্যা হয়ে আসে। অথচ এর ওপর নজরদারি সংক্রান্ত অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আছে। তারা হয়তো কাজও করছেন। সমন্বয়ের অভাব, কাজের দীর্ঘসূত্রিতা যে কোনো সমস্যাকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। অথচ কার্যকর ভাবে সব পদক্ষেপ নিলে, বন্যার অনেক আগেই আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি। আজকাল কয়েক দিন আগে সাবধানী বার্তা জানানো হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমাদের বেশিরভাগ মানুষ সচেতন বা শিক্ষিত নয়। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও সবখানে সমান নয়। বার্তাটি ঠিকভাবে পৌঁছাতে সময় লাগে। দুর্যোগের আগে পর্যাপ্ত সময় না পেলে হাওরপাড়ের একজন কৃষক তার ধান নিরাপদ জায়গায় নিতে পারেন না, তার গরু-ছাগল নিরাপদে কোথাও রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন না।

মোট কথা হলো, আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ উপরে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই দুর্যোগের খবর জানাতে কাজ করবে এবং দুই সপ্তাহ আগে সেটি এলাকায় জানিয়ে দেওয়া হবে।

নদীর ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবাং বন্যার পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য হাওর অঞ্চলের নদীগুলো নিয়মিত ড্রেজিং করা দরকার। এ ক্ষেত্রে সুনামগঞ্জ জেলার মেঘনা বেসিনের উজানে অবস্থিত সুরমা এবং কুশিয়ারা নদী সুনামগঞ্জ অংশ থেকে খনন শুরু করে মেঘনা নদীর ভাটিতে ভৈরব বাজার পর্যন্ত ড্রেজিং করতে হবে। হাওর এলাকায় বন্যায় ধান মাড়াই কাজ, গৃহ-পালিত পশু-পাখির আশ্রয়স্হল, ফসল সংরক্ষণ, কৃষি যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ, কালেকশন পয়েন্ট এসব কাজে ব্যবহারের জন্য ‘কৃষি মাল্টিপারপাস কেন্দ্র’ স্হাপন করতে হবে। বন্যায় গো-খাদ্যের প্রচন্ড অভাব দেখা দেয়। হাওরাঞ্চলে গবাদি-পশুর খাদ্য সংকট নিরসনে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। বন্যার পানি কমে যাবার সাথে সাথে যাতে রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে রাখতে হবে।  আমার মনে হয়, হাওর এলাকার দুর্গত মানুষের পাশে এখন দাঁড়াতে হবে সবাইকে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর জরুরি ভিত্তিতে হাওর এলাকায় ত্রাণ কাজ পরিচালনা করা দরকার। দুর্গত এলাকায় উপযুক্ত পরিমাণে খাদ্য, জলপরিশোধনকারী ট্যাবলেট, পেটের পীড়ারোধের ওষুধ, খাবার স্যালাইন জরুরি ভিত্তিতে পাঠানো দরকার। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্যের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। হাওরের কৃষক বাঁচাতে এখন সরকারি পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বিতরণ জরুরি। সেই সাথে স্থানীয় মহাজনদের হাত থেকে গরিব মানুষকে বাঁচানো প্রয়োজন। সেইসব এলাকায় কাজ করা এনজিওগুলোর এখন বাধ্যতামূলকভাবে ঋণ মওকুফ করতে হবে।

আর হাওর সভ্যতা বাঁচাতে দরকার সবক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে, সাংগঠনিক ভাবে বিভিন্ন দুর্যোগে সবচেয়ে যেটা জরুরি সেটি হলো জাতীয় ঐক্য। এই জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে সকল দেশপ্রেমিক মানুষ এক হয়ে দাঁড়াতে হবে দুর্গত হাওরবাসীর পাশে। আসুন আমরা অন্যদের কথা ভাবি। নিজে যেটুকু ভালো আছি, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি। এদেশে অনেক মানুষ এখনও দুইবেলা খেতে পারলেই খুশি হয়, তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই?

আমাদের মনে রাখতে হবে, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। যদিও কৃষকের কল্যাণে অনেক কথা শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কতটা হয় তা তো বিদ্যমান পরিস্থিতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। হাওরাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের জীবিকার মূল উপজীব্য হচ্ছে কৃষিকাজ ও হাওরে মাছ ধরা। বন্যা দেখা দেওয়ায় এবং সেটি দীর্ঘায়িত হওয়ায় বিকল্প একমাত্র কর্মসংস্থানের মাধ্যম মাছ ধরাও বন্ধ হয়ে গেছে। হাওরবাসীর প্রত্যাশা, সরকার দ্রুত এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে হাওরের কান্না থামানোর জন্য আরো কার্যকর উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে। যে কোনো দুর্যোগেই মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে অগণিত মানুষ। আর অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসা একটি মহৎ কাজ। যে কোনো দুর্যোগ মূহুর্তে প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী সাহায্যের হাত প্রসারিত করা। মানুষ মানুষের জন্য এই নীতি প্রয়োগের উৎকৃষ্ট সময় এখন। হাওর অপূর্ব সুন্দরের লীলাভূমি। মনে হচ্ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাওরের জন্যই লিখে গেছেন, ‘‘সুন্দর, তুমি চক্ষু ভরিয়া এনেছ অশ্রুজল। এনেছ তোমার বক্ষে ধরিয়া দুঃসহ হোমানল’’।

প্রকাশিত পত্রিকা- দৈনিক মানবকণ্ঠ, ২৪ জুলাই, ২০২০

সুন্দর, তুমি চক্ষু ভরিয়া এনেছো অশ্রুজল
Scroll to top