সিলেবাস ও স্বপ্ন বদল সমাচার

হাসান হামিদ

আমাদের দেশের তরুণরা যখন সাধারণ শিক্ষা নিয়ে বিসিএস কিংবা এ ধরনের অন্য একটি চাকরির চেষ্টায় মরিয়া, তখন দক্ষতার অভাবে দেশ থেকে প্রতি বছর চলে যাচ্ছে ১৭ হাজার কোটি টাকার মতো। টাকাটা নিচ্ছে আমাদের দেশে কাজ করা বিদেশী কর্মীরা। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরিচালনা আর উচ্চ বা মধ্যম মানের ব্যবস্থাপনা যোগ্যতা এ দেশের তরুণদের নেই। তাই এই ঘটনা ঘটছে। এ থেকে উত্তরণে শিক্ষা ব্যবস্থার ধারণা ও পদ্ধতি যেমন বদলাতে হবে, তেমনি উন্নত দেশের মতো এ দেশের অভিভাবক শ্রেণি ও সাবাইকে বুঝতে হবে, সাধারণ শিক্ষায় দক্ষতা বাড়ে না। এজন্য চাই কারিগরি শিক্ষা; যে শিক্ষা হবে কর্মমুখী। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, উন্নত দেশে যেখানে কারিগরি শিক্ষা নেয় প্রথম সারির মেধাবীরা, আমাদের দেশে তা উল্টো। চাকরি নেই দেশে, কিন্তু বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা যোগ্য কর্মী পাচ্ছে না। এই ধারণা দুটোর সমন্বয় জরুরি, পাশাপাশি বদলাতে হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বপ্ন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) উপাত্ত মতে, বাংলাদেশের শ্রমশক্তি বছরে গড়ে ২ শতাংশ হারে বাড়ছে। ২০১০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিসিএসে আবেদন করার যোগ্য স্নাতক ডিগ্রিধারীদের বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের মতো (বিবিএস)। অথচ গত ১০ বছরে বিসিএসে আবেদনের গড় বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের কাছাকাছি। আর গত বিসিএসে আগের বিসিএসের তুলনায় প্রায় শতকরা ৪২ ভাগ বেশি আবেদন পড়েছে। এটাকে দেশের বিজ্ঞজনেরা তরুণ প্রজন্মের বিসিএস উন্মাদনা বলেছেন।  তবে গরিব ও অনুন্নত দেশগুলোতে সরকারি চাকরির জন্য বেশি আগ্রহ দেখা যায়। উন্নয়নশীল দেশগুলো যত উন্নতি করে, সরকারি চাকরিতে প্রতিযোগিতা তত কমে যায়। এর পেছনে উন্নয়নের ইতিহাস-সম্পর্কিত কিছু কারণ রয়েছে। দেশ যত অনুন্নত হয়, চাকরির বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের পরিধি তত ছোট থাকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলোর মধ্যে সরকারি খাতের উপস্থিতি তত বেশি হয়। বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপগুলোর উপাত্ত মতে, গত ১৫ বছরে শ্রমবাজারে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের দখল ছিল ৮০ শতাংশের কাছাকাছি এবং স্ব-কর্মসংস্থানের হার ৪০ শতাংশের ওপরে।

বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস (বিবিএস) বলছে দেশ বেকারে ভর্তি। বিবিএস বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ বছরের বেশি বয়সী শ্রমিক বাজারে নতুনভাবে ঢুকেছে ১৪ লাখ। এর মধ্যে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৩ লাখের। এক লাখ বেকার। পুরনো বেকার আছে। নতুন ও পুরনো বেকার মিলে হয় ২৬ লাখ ৮০ হাজার। আবার ছদ্ম বেকার অর্থাৎ আধাআধি বেকার হিসেবে মিলে মোট বেকার হয় ৪১ লাখ ৮০ হাজার। অথচ এক গবেষণা তথ্যে দেখা যাচ্ছে বিদেশীরা বাংলাদেশে কাজ করে প্রতিবছর বহু টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গবেষণা সংস্থা ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’ জানাচ্ছে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে বিদেশীরা কাজ করে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার মতো নিয়ে গেছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, এই টাকার সিংহভাগ নিয়ে যাচ্ছে চীনা কর্মী-শ্রমিকরা। তারা ২০১৬ সালে নিয়ে গেছে ৭ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। তারপরই ইন্দোনেশিয়ার স্থান ২ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। মালয়েশিয়া নিয়েছে এক হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। ভারতীয় কর্মী-শ্রমিকরা নিয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা নিয়েছে মাত্র ৭৬৩ কোটি টাকা। আরও যেসব দেশে ‘আউটওয়ার্ড রেমিটেন্স’ হয়েছে সে সব দেশের মধ্যে আছে: কোরিয়া, ভিয়েতনাম, নেপাল, থাইল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য এবং শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দেশ।

বিশ্বের যেসব দেশ কারিগরি শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সেসব দেশ তত বেশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে বিপণন, উৎপাদন, মার্চেডাইজিং, হিসাবায়ন ইত্যাদির লোক নেই। বিদ্যুত মিস্ত্রী, ওয়েলডিং মিস্ত্রি নেই। টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক নেই। জেনারেল এমএ, বিএতে ভর্তি দেশ। এরা তো কেরানীও না, প্রশাসকও না। বই পড়ে বুঝতে পারে সমস্যা- তাও তারা নয়। এ ফাঁকেই বিদেশীদের আগমন। সারাদেশে টেকনিক্যালি দক্ষ লোক তৈরির কলেজ-প্রতিষ্ঠান দরকার। ব্যবসায়ীদের ‘ব্যাংক-বীমা-অব্যাংক’ করার বদলে বলা দরকার জেলায় জেলায় ভাল স্কুল করার জন্য, যাতে ছেলেমেয়েরা অঙ্ক, বিজ্ঞান, ব্যাকরণ জানতে পারে। খেলা, বিনোদন-সিনেমা, ‘ফেসবুক’ থেকে কিছুটা হলেও ফিরিয়ে বিজ্ঞানের দিকে জাতিকে আনা দরকার। ‘জিডিপি’ বৃদ্ধির কথার সঙ্গে, বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথার সঙ্গে টেকনোলজি, বিজ্ঞান ইত্যাদির কথাও দরকার।

উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের কর্মধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের সকল শ্রেণির শিক্ষিত জনগোষ্ঠি সমন্বিত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে কারিগরি শিক্ষা বিশেষ করে মধ্যমস্তরের কারিগরি শিক্ষা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি সরাসরি কারিগরি ও দক্ষ জনশক্তি ব্যবহারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠির সম্পক্ততার হারের ওপর গড় বাত্সরিক মাথাপিছু আয় নিবিড়ভাবে নির্ভরশীল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, জার্মান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করায় আজ তারা উন্নত বিশ্বের কাতারে অবস্থান নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আত্মঘাতি শিক্ষা ব্যবস্থার কারণেই আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ থেকে তরুণ সমাজকে বাঁচাতে হলে উপরোক্ত দেশসমূহের মতো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার হার নিয়ে কিছু অবস্থা লক্ষ করি এবার। জার্মানিতে ২৭% সাধারণ শিক্ষা ও ৭৩% কারিগরি শিক্ষা, জাপানে সাধারণ শিক্ষা ৩৪% ও কারিগরি শিক্ষার হার ৬৬%, আর সিঙ্গাপুরে          সাধারণ শিক্ষা ৩৫% ও কারিগরি শিক্ষার হার ৬৫%। অস্ট্রেলিয়াতে      সাধারণ শিক্ষা ৪০% ও কারিগরি শিক্ষার হার  ৬০%। এদিকে আমাদের বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষা ৮৬% ও কারিগরি শিক্ষার হার ১৪%। শুধু তাই না, এদেশে সবাই মনে করে যারা হালের বা পালের যোগ্য না, তারাই কারিগরিতে পড়বে। দেশের অভিভাবক মা-বাবা যখন ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করে ডাক্তার বা অন্য সাধারণ কর্মকর্তা বানিয়ে মোটামোটি পারিশ্রমিকে সন্তানের জীবন নিশ্চিত করার কথা ভাবছেন; তারা হয়তো জানেন না মাসে ১৫ বা ১৭ লাখ টাকার বেতনের চাকরিটির জন্য বিদেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে। ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা বেতনের হাজার হাজার পদে যখন বিদেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে, তখন কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবে আমাদের সবচেয়ে মেধাবী তরুণটি ২২ হাজার টাকা স্কেলের স্বপ্নে আজগুবি এক লড়াইয়ের জন্য মরিয়া। এ দোষ কার?

কথা না বলে, উন্নত দেশ গড়তে হলে, আদিম চিন্তার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসুন। দক্ষতা অর্জন আর পরিশ্রমের মাধ্যমে কত কিছু করে ফেলা যায় তা নিয়ে ভাবুন। সন্তাঙ্কে সেভাবেই ভাবতে শিখান। আর যেহেতু কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে এখনও আমাদের দেশে আগ্রহ কম, সেহেতু সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের অনুপাত নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন। অবশ্যই সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের অনুপাত বেশি হতে হবে। নইলে সরকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না। সরকারি নির্দেশনা জারির মাধ্যমে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের শতকরা ৫০ ভাগকে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেক্ষেত্রে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষা গ্রহণের আসন কমিয়ে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের আসন বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ দক্ষতাবিহীন সনদভিত্তিক শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার ও জাতির জন্য বোঝা। কারিগরি শিক্ষাকেই মূলধারা করতে হবে। এজন্য বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ দেশে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণে প্রতি জেলায় একটি করে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও প্রতিটি উপজেলায় একটি করে বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, টেক্সটাইল ও লেদার ইনস্টিটিউটসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ শিক্ষানীতিতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে অধিকতর শক্তিশালী করা ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান ও জনবল বৃদ্ধি, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক-প্রশিক্ষক নিয়োগের অঙ্গীকার করা হলেও বাস্তব অগ্রগতি সামান্যই। আর একটিমাত্র কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পক্ষে বিপুল সংখ্যক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তত্ত্বাবধান করা সম্ভব নয়। দেশে ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা হলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সংখ্যা ১টিই রয়ে গেছে। কারিগরি শিক্ষা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে।

দেশে যদি ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড দরকারি মনে হয়, তবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড স্থাপন হওয়া উচিত অন্তত ১০টা। এ ধরনের কোন পরিকল্পনা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। আর এই পরিকল্পনাহীনতার কারণেই দেশে এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৯টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রায় ৭০০ সরকারি-বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স খোলা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে প্রায় ১০০ হতে চলেছে (সর্বশেষ ৯৮ টি)। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স পর্যায়ে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। প্রতিবছর এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে আসেন প্রায় ৭ লাখ। কিন্তু এত বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত লোকবলের চাহিদা আমাদের শ্রমবাজারে নেই। সে কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকারের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। এ ধারা থেকে পরিত্রাণে সনদনির্ভর দক্ষতাহীন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা হ্রাস করা দরকার। কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল গড়ার জন্য সেই অনুযায়ী সিলেবাস বানাতে হবে, সেই সাথে মান নিশ্চিত করতে হবে। 

কর্মমুখী কর্মসংস্থান সম্প্রসারণের স্বার্থেই কারিগরি শিক্ষাকে মূলধারায় পরিণত করা প্রয়োজন। এর জন্য শিক্ষার এ ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন ও উন্নয়ন দরকার। দেশে একের পর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছেন। কিন্তু নিশ্চিত হচ্ছে না তাদের কর্মসংস্থান। তাই কারিগরি শিক্ষার বিকাশ এবং সে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মমুখী খাতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি জরুরি হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ। এ অঞ্চলের ৪৫টি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আমরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থানে রয়েছি। শুধু তাই নয়, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫-৫৯) মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি। তাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (জনমিতি মুনাফা) বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন অতিক্রম করছে একটি সুবর্ণ সময়। আমরা এ সুযোগ ও সম্ভাবনার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যাশিত উন্নত দেশে পরিণত হতে পারি। কিন্তু তরুণ-তরুণীদের প্রকৃত শিক্ষা ও কাজ দিতে না পারলে সে সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবার আশঙ্কা সর্বাধিক।

শ্রম বাজারে কর্মসংস্থানের হার বাড়াতে হলে কারিগরি শিক্ষাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। কিন্তু সরকারের সঠিক নীতির অভাবে প্রায় ৪ শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অনুমোদিত আসনের প্রায় ৫০ শতাংশ আসন শূন্য থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরি বা কর্মমুখী শিক্ষায় ধাবিত করার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। তাহলেই ২০৩০ সালের দুই-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষম যুবসমাজকে আমরা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে পারবো। আর এ দক্ষ যুবশক্তিই বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছে দেবে – বাস্তবায়িত হবে সরকারের ২০৪১ সালে সমৃদ্ধ ও উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাবার স্বপ্ন। আর স্বপ্ন পূরণে তাই আমাদের স্বপ্নকে তথাকথিত বৃত্ত থেকে বের করে নিয়ে আস্তে হবে।

প্রকাশিত পত্রিকা-

শিক্ষাবার্তা  ২১/০৪/২০১৮

পূর্ব-পশ্চিম বিডি ২১/০৪/২০১৮

সিলেবাস ও স্বপ্ন বদল সমাচার
Scroll to top