হাসান হামিদ
কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার মতো সবাই কি সত্যি এমন? কথা না রাখার অভিযোগটি বেশি শোনা যায় আমাদের রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এদেশে যারা রাজনীতি করেন, তারা কি সবাই কথা না রাখা নাদের আলী? নির্বাচনের আগে দেওয়া কথা পড়ে না রাখা অনেক দিন ধরেই জনগণের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে মনে হয়; তারপরও সামগ্রিক বিবেচনায় বর্তমান সরকার কী কী অঙ্গীকার করেছিলো, আর কী কী নাদের আলীর ঝুলিতে রয়ে গেছে তা খতিয়ে দেখা যাক। আশার কথা হলো, বর্তমান সরকার নানা প্রতিকূলতা ও সমস্যা মোকাবিলা করেও অনেক সাফল্য নিজেদের কৌটায় জমা করতে পেরেছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৪ ঘোষণা করেছিলেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ স্লোগানে ৪৮ পাতার ইশতেহার ঘোষণা শুরু করেছিলেন তিনি। সেসময় পরবর্তী ৫ বছরের জন্য ইশতেহার দিলেও এতে দূরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে ২০৪১ সালের অর্জনের কথাও বলা হয়েছিল। আমরা দেখেছি একে রূপকল্প ২০৪১ বলেছে আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রধিকার পেয়েছিল প্রশাসন, গণতন্ত্র, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয়করণ, কৃষি, ধর্মীয় স্বাধীনতা, দারিদ্র্যের হার ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, নগরায়ণ, পরিকল্পতি উন্নয়ন, ১০ হাজার থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। সেই সঙ্গে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রথম সারির উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে বাংলাদেশকে উন্নত করা।
ইশতেহারে বলা হয়েছিল -আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। শুরু হয়েছে দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদতা থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের ঐতিহাসিক কালপর্ব। ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন, অগ্রগতির যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও পথ রচিত হয়েছে, সে পথ থেকে কোন অপশক্তি আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না। সেদিন ইশতেহার ঘোষণার শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয় মেয়াদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি জাতীয় সনদ ২০১৪ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং দেশকে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আপনারা আরেকবার দেশ সেবার সুযোগ দেবেন। তারপর আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় বসে।
বর্তমান সরকারের সাফল্য বা কথা দিয়ে কথা রাখা বিশ্লেষণের আগে একটু ইতিহাসের দিকে আমরা দেখি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার শপথ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সেই পাঁচ বছর কেমন ছিল? তারা তাদের অঙ্গীকার পূরণ করেছিল। তবে তাদের অঙ্গীকার ও কর্মসূচি নির্বাচনী ইসতেহার অনুযায়ী কেবল পাঁচ বছরের জন্য ছিল না। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল একটা দীর্ঘমেয়াদি সুস্পষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত রূপকল্প-২০২১ বা ভিশন তারা উপস্থাপন করেছিল। মূল্যস্ফীতির হার ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭.৫ শতাংশে স্থিতিশীল করা হয়। পক্ষান্তরে জনগণের আয়-রোজগার বৃদ্ধি পায়। আমার দেখেছি বাংলাদেশের পাঁচ বছরে আমাদের জাতীয় বাজেটের আয়তন ২০০৬-এর তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩.৭ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৩.৭গুণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ গুণ। তাছাড়া রপ্তানি আয় বেড়েছিল আড়াই গুণ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ৩ গুণের বেশি বেড়েছিল।
২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে রাশিয়ার সাহায্যে ২০০০ মেগাওয়াটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ২০১৩ সালে সাধারণ দারিদ্র্যসীমা ২৬.২ শতাংশে নেমে এসেছে। সেই পাঁচ বছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছিল। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংগঠিত খাতে ৬৯ লাখ মানুষের এবং বিদেশে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার-২০০৮-এ সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছিল অন্যতম অগ্রাধিকারের বিষয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, শুরুতেই এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারকে হোঁচট খেতে হয়; মোকাবিলা করতে হয় অকল্পনীয় চ্যালেঞ্জ। জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণ করার মাত্র ৫২ দিনের মাথায় সংঘটিত হয় রক্তাক্ত বিডিআর বিদ্রোহ। আমরা দেখেছি চরম ধৈর্য, অসীম সাহস ও রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিডিআর বিদ্রোহের শান্তিপূর্ণ সমাধান করেন। সেনাবাহিনীতে আস্থা ফিরিয়ে আনেন।
সেই সময়ের একটি বিশেষ সফলতা হলো, আওয়ামী লীগ সরকার রাজস্ব খাতে ৪ লাখ ২৭ হাজারের বেশি পদ সৃষ্টি করেছে এবং ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি পদ স্থায়ী করেছে। তাছাড়া কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা, কৃষি গবেষণা এবং কৃষির আধুনিকায়নে অর্জিত হয়েছে যুগান্তকারী সাফল্য। সারের দাম কয়েক দফা হ্রাস, কার্ডের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ বিতরণের ব্যবস্থা, মাত্র ১০ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগদান গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সেসময় শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী অগ্রগতির সাক্ষর আমরা দেখেছি। ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রা থমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীর চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকদের পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা, ট্রেনিং ও দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা, প্রতি উপজেলায় একটি করে বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে পরিণত করার কার্যক্রম চলছে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন, ভর্তি পরীক্ষা, পরীক্ষার ফল প্রকাশ প্রভৃতি জনগণের প্রশংসা অর্জন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার সেসম্য় ৬টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। গণযোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। প্রতিটি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল। আর এ কারণে আমরা সন তথ্য অনলাইনে পেয়ে যাই এখন।
এরপর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার কী কী উন্নয়ন কর্মকান্ড ও অগ্রগতি এনেছে তা দেখি এবার। গত চার বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হারছিল ৬.৫ শতাংশ। এছাড়া মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, রিজার্ভ প্রায় ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রেমিট্যান্স ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়ন করা এবং Financial Reporting Act অনুমোদনের পর ২০১৬ সালে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রনয়ন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি একটি সাহসী ও দুরদর্শী পরিকল্পনা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচির ব্যয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়নে। তাছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ১৬৭৯.৮১ কোটি মার্কিন ডলার। বিশ্ব ব্যাঙ্ক-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যবসায় প্রতিযোগিতামুলক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোর রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ‘পাওয়ার হাউজ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।
শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উপবৃত্তি ও বেতন মওকুফ সহায়তা হিসেবে ৪৯ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৮৫ শিক্ষার্থীকে ৮৮০.২৭ কোটি টাকা বিতরন করা হয়। জাতিসংঘের বেধে দেয়া সময়সীমার তিন বছর আগেই ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাগত সমতা অর্জন করে। এটি সম্ভব হয়েছে মহাজোট সরকারের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের অংশ হিসেবে ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ২০১৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নীট ভর্তির হার ৯৭.৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়ে ২০.০৯ শতাংশে দাড়িয়েছে। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের দপ্তরসমূহে ইন্টারনেট সংযোগসহ ৫৫টি পিটিআইতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ৫ হাজার ৪৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া,ইন্টারনেট মডেম ও সাউন্ড সিস্টেম সরবারহ করা হয়েছে। আইসিটি ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে মোট ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবসহ সারা দেশের দুই হাজার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখার মতো। মানুষের গড় আয়ু ৭১.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার কমে প্রতি হাজারে ২৯ জনে দাড়িয়েছে। মাতৃমৃত্যু হারও কমে প্রতি লক্ষে ১৭০ জনে নেমে এসেছে। ৬৪টি জেলা হাসপাতাল ও ৪২১টি উপজেলা হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে ১৬২৬৩ নম্বরে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগে ৮৫টি দেশে ওষুধ রফতানি হতো। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ১২৫টি দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে। দেশের কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় অর্ধ লক্ষাধিক রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছে।
আমরা জানি, ২০১৫-১৬ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে ৩৯১.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন। উৎপাদনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৯০০০ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে ২৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ৩০ শতাংশ ভর্তূকিতে যন্ত্রাংশ সরবারহের জন্য ১৭২.১৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নসহ হাওড় অঞ্চলে কৃষিযন্ত্র সরবারহের জন্য ১০.৬০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার নিয়েছে এক অনন্য উদ্যোগ। যুদ্ধাহত ও ভুমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নির্মান করা হয়েছে বীর নিবাস। ইতোমধ্যে সিলেটে ৬২টি বীর নিবাস হস্তান্তর করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়ানো হয়েছে এবং ভাতাভোগীদের সংখ্যা ২ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়মিত ভাতা প্রদান একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
ভাবতেই ভালো লাগে, পদ্মা সেতুর মূল অংশ এখন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দুটি সার্ভিস এরিয়া, কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। মোট ৪১ টি স্পানের মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যে প্রকল্প অঞ্চলে এসে পৌঁছেছে। মাওয়া পয়েন্টের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ, আর জাজিরা পয়েন্টের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মানের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চট্রগ্রামের কর্নফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মানে চীন সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ২০১৬ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে সংগ্রহ করা কোচ দিয়ে একতা, দ্রুতযান ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়েছে। এ তিনটি ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, ঢাকা-দিনাজপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করছে। এ ছাড়া লাল সবুজ রঙ্গের কোচ দিয়ে ৫টি ট্রেন চালু করা হয়েছে। এ নিয়ে নতুন ট্রেনের সংখ্যায় দাঁড়ালো সাতে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলঅধিদপ্তরের (LGED)বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার ( উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম) সড়ক, ৪৩ হাজার ২৫০ মিটার ব্রীজ/কালভার্ট নির্মান করা হয়েছে। রাজধানীর যানজট সমস্যা নিরসনে LGED বর্তমানে ৭৭৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভার প্রকল্পের অধীন ৮.২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চারলেন বিশিষ্ট একটি ফ্লাইওভার নির্মানের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ২৪০০ মেগাওয়াটবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন লক্ষ্যে রাশিয়ান ফেডারেশন নির্ধারিত ঠিকাদারের সাথে ৩টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আবার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জেলা/উপজেলা পর্যায়ে ১৮,১৩০ টি সরকারি অফিসে কানেক্টিভিটি স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ,ভারত,নেপাল ও ভূটান আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে এবং বাংলাবান্ধা পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে। দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় ৫১ লাখ ২০ হাজার প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা ও শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাঝে সরকার বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করছে। পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ২৪,১৫,০০০ জন। দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পল্লীমাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৩১৮টি কর্মসূচির আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ৮৩৪৯৬০।
২০১৬ সালে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ উদ্যোগে অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধকল্পে বিদ্যমান টাস্কফোর্স কে আরও বেগবান করার ফলে বিগত বছরে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশির অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ২০১৬ সাল একটি মাইলফলক। এই বছর চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে আসেন। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ২৬টি চুক্তি সম্পাদন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ এ বছর গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (GFMD) এর নবম সম্মেলন আয়োজন করে। ১৩০ টি দেশের ৬০০ জন সরকারী কর্মকর্তা ও ৩০টি বেসরকারী সংস্থার ৬০ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিকদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এবং প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা (MRV) প্রদান করা হয়েছে।
এসব দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বর্তমান সরকার কথা দিয়ে কথা রেখেছে অনেকখানি এবং চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা তাই স্বপ্ন দেখি, ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি পাবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা চাই আরও সফলতা, রাজনীতিতে আমরা নাদেরআলীদের চাই না!
প্রকাশিত পত্রিকা-
বিডিটুয়েন্টিফোর লাইভ ডটকম ২১/১১/২০১৭