ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিটে কার লাভ : হাসান হামিদ

পৃথিবী নামের এই গ্রহের বেশিরভাগ দেশই আসলে Landlocked country, বাংলায় যাকে বলা হয় স্থলবেষ্টিত দেশ। বাংলাদেশ পুরোপুরি স্থলবেষ্টিত না হলেও এর তিন দিকেই ভারত। বাংলাদেশ এবং ভারত একটা ৪,১৫৬ কিমি লম্বা আন্তর্জাতিক সীমানা অংশ ভাগ করে। এটি বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভূমি সীমানা, যার মধ্যে আছে আসাম ২৬২ কিমি, ত্রিপুরা ৮৫৬ কিমি, মিজোরাম ১৮০ কিমি, মেঘালয় ৪৪৩ কিমি এবং পশ্চিমবঙ্গ ২,২১৭ কিমি। আর একদিকে সমুদ্র থাকায় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আছে। কিন্তু স্থলবেষ্টিত অনেক দেশ আছে যাদের কোনো সমুদ্র সীমাই নেই। অর্থাৎ সমুদ্রপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ সেসব দেশের নেই। আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এমন দেশগুলোকে অন্য দেশের ট্রানজিট নিতে হয়। ট্রানজিট সহযোগিতার একটি মাধ্যম হলেও ব্যাপারটি কিন্তু পুরোপুরি অর্থনৈতিক। সেজন্য ট্রানজিটকে বিবেচনা করতে হবে অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাবেই। সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনা বেশি প্রাধান্য পেলে প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে দুর্বল দেশটি। আর ঠিক এমনটিই ঘটছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।

ভারত-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের আলোচনায় অনেকেই দেনা-পাওনার হিসেব কষেন। সেজন্য ভারত-বাংলাদেশ যখন ট্রানজিট চুক্তি করে তখন অনেকেই অনুমান করেছিলেন ভারত এক্ষেত্রে বেশি সুবিধা পেতে পারে! কিন্তু ট্রানজিটে তাদের কী সুবিধা দেয়া হবে, কিংবা বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে, এতে কার লাভ কতটুকু এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বর্তমান সরকারও কখনো খোলাখুলি কিছু জানায়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের রাজ্যগুলোতে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহের জন্য নতুন আরও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। আবার গত ৮ আগস্ট ভারতের ট্রানজিট পণ্যের চালান এসেছে মোংলা বন্দর দিয়ে। যাতে ভারতের ষোলআনা সুবিধা ভোগ হচ্ছে এটি স্পষ্ট। এর বিপরীতে নেপাল-ভুটানে পণ্য পাঠাতে বাংলাদেশকে ভারতের ‘চিকেন নেক’ দিয়ে ট্রানজিট না দেয়ার ঘটনায় ‘ট্রানজিট একতরফা কিনা’ বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ ভারতকে প্রায় সবক্ষেত্রে ট্রানজিট সুবিধা দিলেও ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশী যানবাহনের নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট সুবিধা নিয়মিত হয়নি। ভারত বাংলাদেশকে কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে! অথচ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে যে ১৩ রুট রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য আনা-নেয়া শুরু করছে ভারত। আর এতে আগের তুলনায় ভারতের খরচ কমেছে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ। আর এমন সুবিধার পরও বাংলাদেশকে ২১ কিলোমিটার সড়ক (চিকেন নেক নামের করিডোর) ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছে না ভারত! উল্টো চিকেন নেক-কে কার্যত অচল করে রেখেছে দেশটি।

চিকেন নেক বলা হয় আসলে শিলিগুড়ি করিডোরকে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত শিলিগুড়ি ভূখণ্ডটির আকৃতি অনেকটাই মুরগির ঘাড়ের মতো। আর এ কারণে একে চিকেন নেক বলা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বৃহত্তর বাংলা দুই ভাগ হলে ‘চিকেন নেক’ করিডোরটি সৃষ্টি হয়। ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই করিডোরটি মূলত বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যবর্তী সরু ভূখণ্ড; অর্থাৎ এ করিডোরের দুই পাশে বাংলাদেশ ও নেপাল অবস্থিত। তবে শিলিগুড়ি জেলার সীমানায় রয়েছে ভুটান, নেপাল, সিকিম, বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী প্রধান কেন্দ্র। শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন নেক নামের সরু ভূখণ্ডের প্রস্থ স্থানবিশেষে ২১ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এই সামান্য জায়গা ট্রানজিট সুবিধা পেলে বাংলাদেশের অনেক লাভ হত। অথচ বাংলাদেশকে ভারত তা দিচ্ছে না। চারটি দেশের পরস্পর স্বল্প দূরত্বের এই করিডোরটি প্রায় অচল করে রেখেছে ভারত। এতে করে অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে আছে আন্তঃদেশীয় মিলনমেলায় সহযোগিতার দ্বার। অবশ্য প্রায় কুড়ি বছর আগে ২০০২ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এই এলাকায় একটি মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এমনকি এখানে অবাধে চার দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের অঙ্গীকারও করা হয়। কিন্তু ভারতের অসহযোগিতার মুখে এসব সম্ভাবনা আর আলোর মুখ দেখেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর সবটাই আসলে ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি। বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহন ভারতের জন্য অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হচ্ছে৷ অন্যদিকে বাংলাদেশে অনুমিত ভারতীয় অর্থনৈতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ ট্রানজিটে পথে প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশের এ ধরনের বিরোধীতার অন্যতম কারণ হলো ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি।

সূত্র বলছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের রাজ্যগুলোতে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহে অস্থায়ী সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট স্বাক্ষরিত এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভারত ত্রিপুরা, দক্ষিণ আসাম এবং মিজোরামে বিকল্প পথে মোটর স্পিরিট, হাই-স্পিড ডিজেল, সুপিরিয়র কেরোসিন তেল এবং তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসসহ পেট্রোলিয়াম পণ্য চলাচলের সুবিধা পাবে। এর জন্য প্রতি কিলোমিটারের খরচ নির্ধারণ হয় প্রতি টনে মাত্র ১ টাকা ৮৫ পয়সা। মেঘালয়ের ডাউকি থেকে বাংলাদেশের তামাবিল, সিলেট, ফেঞ্চুগঞ্জ হয়ে সিলেট বাইপাস ব্যবহার করে রাজনগর, মৌলভীবাজার, শমশেরনগর, চাতলাপুর থেকে ত্রিপুরার কৈলাশরে পৌঁছাবে। সিলেট বিভাগের কিছুদিন আগে হওয়া বন্যায় বিধ্বস্ত সড়ক, মহাসড়ক ব্যবহার করে ট্রানজিট-করিডোর ব্যবস্থায় জ্বালানি তেল ও এলপিজি গ্যাস পরিবহন করবে ভারত। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ভারত পণ্য পরিবহন করতে ব্যবহার করছে বাংলাদেশের মোটামুটি ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার সড়ক। আর এদিকে নেপাল-ভুটানে সরাসরি পণ্য পাঠাতে ভারতের মাত্র ২১ কিলোমিটার সড়ক ব্যবহার করার অনুমতি বাংলাদেশকে দিচ্ছে না ভারত সরকার। বিশ্লেষকরা এর দুটি কারণের কথা উল্লেখ করছেন। প্রথমত, নেপাল ও ভুটানে ভারতের একচেটিয়া বাজার হারানোর ভয় এবং দ্বিতীয়ত, ট্রানজিট প্রশ্নে বাংলাদেশের দরকষাকষির দুর্বলতা।

বাংলাদেশ শুধু ট্রানজিটের পথ হয়েই থাকবে কি না – সেই প্রশ্নও এখন অবান্তর নয়। ভারত যখন সেই নব্বইয়ের দশকে প্রথম বাংলাদেশের কাছে ট্রানজিট প্রসঙ্গটি তুলেছিল তখন তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, “মংলা বন্দর থেকে ভারত যদি ট্রানজিট সুবিধা নেয়, বাংলাদেশকেও বাংলাবান্ধা দিয়ে নেপালে বা অন্য কোন জায়গা দিয়ে ভুটানে যাওয়ার ট্রানজিট সুবিধা ভারতকে দিতে হবে। এটা নিয়ে বাংলাদেশের বার্গেইন করা উচিৎ। যাতে এটা বহুপাক্ষিক হয়। সেই সুযোগ বাংলাদেশের আছে। এমন না হলে দুটো সার্বভৌম দেশের মধ্যে একটা সমতার সম্পর্ক হল না।” বাংলাদেশের সাথে নেপালের সরাসরি সীমান্ত না থাকায় বাংলাদেশ বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে ভারতের জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি হয়ে স্থলপথে নেপালের কাঁকরভিটা যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ যথেষ্ট দরকষাকষি করেনি বলে মনে করেন তিনি। বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে এই পথে স্থলপথে নেপালের কাঁকরভিটা যেতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে। এসব কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার এ চুক্তিকে ‘অসম’ বলে উল্লেখ করেন এ অর্থনীতিবিদ।

সম্প্রতি (গত ৮ আগস্ট) বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি রিশাদ রায়হান’ যোগে ভারতের ট্রানজিট পণ্যের চালান আসে মোংলা বন্দর দিয়ে। আর এটি এ বন্দরে আসা প্রথম চালান। এই চালানে আনা ১৬ দশমিক ৩৮০ মেট্রিক টন লোহার পাইপ সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ে পৌঁছে যায়। তাছাড়া সাড়ে ৮ মেট্রিক টন প্লাস্টিকের কাঁচামাল কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থল সীমান্ত দিয়ে সরাসরি ট্রাকযোগে আসামে নিয়ে যাওয়া হয় পরদিনই। এর মানে ভারতের জন্য ব্যাপারটা কত সাশ্রয়ী ও সহজ হয়েছে! এতে করে কেউ কেউ মনে করছেন, বাংলাদেশ-ভারতের ট্রানজিট ও করিডোর বিষয়ে বাংলাদেশের তাহলে প্রাপ্তি কী? অবশ্য খেয়াল করলে বোঝা যায়, ট্রানজিট চুক্তির শিরোনামেই ব্যাপারটা আসলে অনেকখানি স্পষ্ট। দিল্লিতে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত এই চুক্তির প্রথমেই বলা হয়েছে: ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফরম ইন্ডিয়া’। সেই অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত তার পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় মালামাল পরিবহন করার সুযোগ পাবে এটিই তো স্বাভাবিক। চুক্তি অনুসারে ভারতের পণ্য ভারতেই যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে করিডোর সুবিধায়। যা আসলে একতরফা ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবস্থা। তাতে বাংলাদেশের কোন পণ্য কিন্তু ভারতে রফতানি হচ্ছে না। ইতোমধ্যে করিডোর সুবিধায় ভারতের ট্রানজিট পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। আগে যেখানে ১৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতা বন্দর দিয়ে রফতানি হতো আসামের পণ্য, সেখানে বাংলাদেশের ৫২০ কিলোমিটার সড়ক ব্যবহার করে অনেক সহজে পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম ও মেঘালয় রাজ্য। এটি হওয়ার দরুণ ভারতের সময় এবং অর্থ দুটোই বেঁচে যাচ্ছে উল্লেখ করার মতো। আরেকটি তথ্য হলো, ভারতকে প্রতি টনে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশকে দিতে হবে মাত্র ৫৫৪ টাকা। এমনকি প্রতি কিলোমিটার সড়ক ব্যবহারে খরচ হবে দুই টাকার মতো। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে যে রুটগুলো আছে, সেগুলো ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য আনা-নেয়ায় খরচ কমবে অন্তত ১২ থেকে ৭৬ শতাংশ। এত এত সুবিধা পাওয়ার পরেও ভারত কিন্তু বাংলাদেশকে নেপাল ও ভুটানে পণ্য রফতানিতে নিয়মিত ট্রানজিট দিচ্ছে না।

কিন্তু প্রশ্ন জাগে, কেন এমন করছে ভারত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপাল ও ভুটানের আমদানির অন্তত ৯০ শতাংশের উৎস ভারত। আর বাকি ১০ শতাংশ অন্য দেশ থেকে আমদানি হলেও ব্যবহার হয় কলকাতা বন্দর। যা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় নেপাল ও ভুটানে পৌঁছে দেয় ভারতীয় যান। এখন বাংলাদেশকে যদি ভারত ট্রানজিট দেয় তাহলে সরাসরি পণ্য নিতে আগ্রহ বাড়বে নেপাল-ভুটানের। পাশাপাশি পণ্য আমদানিতে কলকাতার পরিবর্তে মোংলা বন্দর ব্যবহারে খরচও কমবে প্রায় ৩০ শতাংশ। এসব কারণেই ভারত নিয়মিত ট্রানজিট দিতে টালবাহানা করছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবি ড. মাহফুজ কবীর। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তারা কখনও চাইবে না তাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হোক, তাদের বড় স্বার্থ হলো কলকাতা বন্দরকে ঘিরে, তাদের ওখানে যে সমস্ত কারখানা আছে সেখান থেকে জিনিসপত্র নেপাল ও ভুটানে রফতানি হচ্ছে। সেহেতু পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে বড় ধরনের একটা চাপ আছে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর।

এসব কিছু পর্যবেক্ষণ করে অর্থনীতিবিদরা একে একতরফা ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা বলে আখ্যায়িত করছেন। তাদের মতে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভাটির দেশ বাংলাদেশের ভূমি প্রধানত বালিমাটির। নরম মাটির ওপর তৈরি দেশের রাস্তাঘাট-সড়ক। এতে করে ট্রানজিটের ভারী ট্রাকবহরের চাপে সড়ক ভেঙেচুরে দেবে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় বিশেষ করে সিলেট, কুমিল্লা অঞ্চলের সড়ক, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় ভাঙাচোরা, জরাজীর্ণ সড়ক, রাস্তাঘাট দিয়ে ট্রানজিটের পণ্যবোঝাই ভারী ট্রাক-লরি চলাচল করতে গেলে সড়ক আরও বিধ্বস্ত হয়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে প্রবীণ ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মু. সিকান্দার খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, বন্ধুত্ব হতে হবে পরস্পরের চাওয়া-পাওয়া, দেয়া-নেয়ায় সমতার ভিত্তিতে। ওয়ান-টু-ওয়ান যাচাই হতে হবে। আমরা কী দিয়েছি তারা কী দিলো এর হিসাব প্রয়োজন। আখাউড়া, তামাবিল, কুমিল্লা দিয়ে ট্রানজিটের ট্রায়াল রানের পণ্য চালান যাচ্ছে। তবে রাস্তাঘাট-সড়ক ঠিকঠাক রাখতে হবে। তিনি বলেন, ট্রানজিটের ভারী যানবাহন গেলে তার চাপে সড়ক ভেঙেচুরে ও দেবে যাবে। আমাদের দেশে নরম মাটির ওপর রাস্তাঘাট-সড়ক তৈরি। এসব ভারী বাহন চলাচলের অনুমতি দেয়ার আগেই মাটি পরীক্ষা করতে হবে। কারিগরিভাবে মনিটরিং হতে হবে। যাতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থাৎ আমাদের সম্পদের ক্ষতিসাধন না হয়।

মনে রাখতে হবে, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে নেপাল, ভুটান এবং নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। আর ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে যে সুবিধাগুলো বাংলাদেশের আছে সেসবের সদ্বব্যবহার সরকারের করা উচিত যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও সমৃদ্ধ হয়।

ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিটে কার লাভ : হাসান হামিদ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Scroll to top