বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণে প্রস্তুতি পর্বেই সঙ্কট

হাসান হামিদ

চলতি শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষের দিকে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি আছে মাত্র আড়াই মাস। আর ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার পাঠ্যবই মুদ্রণের কথা রয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বই মুদ্রণের কাজ শুরু তো দূরের কথা, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এখন পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি। সব মিলিয়ে শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিন নতুন বই হাতে পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ অতীতে দেখা গেছে, পাঠ্যবই মুদ্রণ নিয়ে বছরের শেষদিকে সাধারণত ঝামেলা হয়। সেটি মেটাতেই হিমশিম খায় সংশ্লিষ্টরা। অথচ এ বছর  প্রস্তুতি পর্বেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। ফলে সময় মতো বই পাওয়া এখন অনেকটাই অনিশ্চিত বলা যায়।

প্রশ্ন জাগে, বছরের শুরুতে বই হাতে পাওয়ার বিষয়টি কি তাহলে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড? আর যদি বিষয়টিকে এনসিটিবি গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তাহলে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ নিয়ে কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় প্রায় প্রতি বছর? এর উত্তর এনসিটিবি-কেই দিতে হবে, কারণ পাঠ্যবই সময় মতো মুদ্রণ এবং বিতরণের দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানের। তাই এবার যে সংকট তৈরি হয়েছে এর দায়ও পুরোপুরি এনসিটিবি’র। সূত্র বলছে, সাধারণত বই মুদ্রণে যাওয়ার আগে বাজারদর দেখে এনসিটিবি প্রথমে সম্ভাব্য দর ঠিক করে। আর এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বইয়ের প্রতি ফর্মার যে দর নির্ধারণ করেছিল, কাজ পাওয়ার জন্য নজিরবিহীন প্রতিযোগিতায় নেমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর চেয়ে অবিশ্বাস্য কম দরে অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ কমে দরপত্র দাখিল করে। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে উল্লেখিত খাত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে  ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়াসহ বিদ্যুৎ ঘাটতি এবং জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্যের প্রভাব পড়ায় উল্লিখিত দরে পাঠ্যবই মুদ্রণ নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজ করবে না বলে জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দর সমন্বয় না করলে এবার যথাসময়ে পাঠ্যবই মুদ্রণ এবং আগামী বছর তা যথাসময়ে বিতরণ করা যাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। 

অথচ আসন্ন শিক্ষাবর্ষের জন্য তো চলতি বছরের চেয়ে কম বই ছাপানোর কথা রয়েছে। এজন্য প্রশ্ন উঠেছে, তবুও কেন সমস্যার সৃষ্টি হলো? কেন মুদ্রণকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও এখনো চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি এনসিটিবি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বছর পাঠ্যবই নিয়ে সৃষ্ট অবস্থা তৈরির পেছনে মূল কারণ তিনটি। প্রথমত, বিলম্বে শুরুর কারণে পাঠ্যপুস্তকসংক্রান্ত ছয়টি দরপত্রের মধ্যে একটির প্রক্রিয়াও এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি এনসিটিবি। এ কারণে বই মুদ্রণের জন্য চুক্তিও করা যায়নি। দ্বিতীয়ত, নতুন শিক্ষাক্রমে আগামী বছর চারটি শ্রেণিতে বই দেওয়ার কথা। বিলম্বের কারণে প্রাথমিকের পাইলটিং করা যায়নি। অবশ্য মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিং কোনোমতে সম্পন্ন হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত বই চূড়ান্ত হয়নি। তৃতীয়ত, ডলার, জ্বালানি তেল ও কাগজসহ বই মুদ্রণের অপরিহার্য উপাদানের দাম বৃদ্ধিসহ বিদ্যুতের বিদ্যমান পরিস্থিতিও তৈরি করেছে এমন সংকট।

জানা যায়,  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ থেকে তাদের শিক্ষার্থীর মোট তথ্য এনসিটিবিকে সরবরাহ করা হয়েছে আরও আগেই। দুই বিভাগ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম-দশম এবং সমমানের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় মোট ১ কোটি ৮৯ লাখের মতো শিক্ষার্থীর তথ্য দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের ১ কোটি ৮৯ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মোট ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যপুস্তক ছাপার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার কোটি ১৭ লাখের মতো। তাদের জন্য আগামী ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ছাপা হচ্ছে প্রায় ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার পাঠ্যবই। সূত্র বলছে, এবার শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমায়, বইয়ের সংখ্যাও কমেছে। ২০২১ শিক্ষাবর্ষে রেকর্ড সংখ্যক ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ কপি পাঠ্যবই ছেপে বিতরণ করা হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে সারাদেশে বিতরণ হয়েছে ৩৫ কোটি ১৬ লাখের মতো বই। এ হিসাবে ২০২১ থেকে ২০২২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত-এক বছরে প্রায় ৭৭ লাখ কপি পাঠ্যবই মুদ্রণ ও বিতরণ কমেছে। আগামী ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৪ কোটি ৬২ লাখ কপি বই মুদ্রণ ও বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি। এ হিসাবে চলতি শিক্ষাবর্ষের তুলনায় আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য আরও ৫২ লাখ কপি পাঠ্যবই কম ছাপা হচ্ছে।

কেন আগের তুলনায় কম বই ছাপা হচ্ছে? সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের কারণে টানা দুই বছর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এই সময়ে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঝরে পড়ছে। করোনা মহামারীর প্রভাবেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আর সেজন্যই মুলত কমছে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণ। অবশ্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড দাবি করেছে, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে পাঁচ শতাংশ বেশি ‘বাফার স্টক’ বা আপদকালীন মজুদের বই না ছাপানোর কারণে এই সংখ্যা কমছে। পাশাপাশি আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে। সেটি হলো, বিগত বছরগুলোতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে বইয়ের চাহিদাপত্র পাঠাত, সেটিও দুই বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ফলে কমেছে বই মুদ্রণের সংখ্যা। বই কম ছাপা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী আমরা পাঠ্যবই ছেপে থাকি। তবে গত দুই বছরে আমরা বইয়ের অপচয় রোধ করেছি। অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী বেশি দেখিয়ে বইয়ের চাহিদা পাঠানো সেটি কমানো হয়েছে।’

বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপার কাজটি কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করে এনসিটিবি? জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানটি প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক, দাখিল ও ভোকেশনাল স্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিনামূল্যে বিতরণ করে। আর পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ ক্রয় করে মুদ্রণকারীদের সরবরাহ করে থাকে এনসিটিবি। তাছাড়া কাগজসহ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের কাছে দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সকল ক্ষেত্রেই সবসময় দরপত্রে বর্ণিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মানসম্মত কাগজে পাঠ্যপুস্তক ছাপানো হয় না। এখানে বিশাল অঙ্কের টাকার দুর্নীতি হয়।  

সূত্র বলছে, এনসিটিবিতে মুদ্রণ কাজের তদারককারী প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে নিয়মিতভাবে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের একটি অংশ পাঠ্যবই মুদ্রণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে অবৈধভাবে জড়িয়ে পড়ার কারণে তাদের সহযোগিতায় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে রি-সাইকেল্ড কাগজ ক্রয় করে অত্যন্ত নিম্নমানের বই ছাপাচ্ছে। আর নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানো হলে একদিকে ছাপার মান খারাপ হয়, অন্যদিকে বইও তেমন টেকসই হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বইয়ে ছাপানো ছবি থেকে কালি উঠে যায়, ছবি বোঝা যায় না। তাছাড়া এই নিম্নমানের কাগজে নানা ধরনের রোগ-জীবাণু থাকে, যা শিশুস্বাস্থ্য ও চোখের জন্য ক্ষতিকর। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কয়েক বছর আগে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। তারা তখন বলেছিল, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি তৈরি, ছাপা ও বিতরণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়।  তাদের প্রতিবেদনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’র পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা ও সরবরাহের সর্বমোট ২০টি ধাপের মধ্যে ১৬টি ধাপে সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। ২০১৭ সালে করা এই গবেষণায় এনসিটিবি’র কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন কমিটির সদস্য, পাণ্ডুলিপি লেখক, সংশ্লিষ্ট সম্পাদক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ, তদারকি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম কর্মীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। 

টিআইবি’র গবেষণায় বলা হয়, এনসিটিবি কর্মকর্তারাও এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেদনে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের মতাদর্শীদের প্রাধান্য দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে কাউকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। কোনো ক্ষেত্রে লেখা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের প্রভাব দেখা যায়। আবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের কোনো কোনো বিষয় এবং শব্দ পরিবর্তন করা হয়। তাদের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিক্ষাক্রম অনুসরণ না করেই অনেক সময় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখা পরিবর্তন করা হয়। পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা বলা হয়, এনসিটিবির কর্মকর্তাদের একাংশ পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বানের আগেই প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাক্কলিত দর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়। পরে এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে দরপত্র দাখিল করে। বিতরণ পর্যায়েও নানা ধরনের অনিয়ম হয় বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়। এ বিষয়ে বলা হয়, কয়েকটি জেলায় নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই সরবরাহ করা না হলেও পরে সঠিক সময়ে প্রাপ্তি প্রতিবেদন দেয়া হয়। প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এনসিটিবির পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন–প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ, সঠিকভাবে পাণ্ডুলিপি রেখা হচ্ছে না, দলীয় রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত প্রভাব বিদ্যমান দেখা যায়। পাঠ্যবই ছাপায় দুই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। প্রথমত, ব্যক্তিগত আর্থিক সুবিধা আদায় এবং কার্যাদেশ প্রদানে দুর্নীতি। 

গত কয়েক বছরে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে বলা যায়, প্রায় প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো পাঠ্যবই দিতে এনসিটিবি’র দৌড় শুরু হয় একেবারে শেষবেলায়। আর এ কাজের সাথে জড়িতরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সেই ১৯৮৩ সালের জনবল ও কিছু সেকেলে সিস্টেম কাঠামোতে চলছে এই প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেক বছর সমস্যার কথা শোনা যায়, তাহলে সমাধান হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, আসলে আমাদের লোকবল ১৯৮৩ সালে যেভাবে এনসিটিবি গঠন করা হয়েছিল সেভাবেই এখনও আছে। আগে তো আমাদের বই ছাপাতে হতো না। পাবলিক পাবলিশার্সরাই আমাদের পাণ্ডুলিপি তারা ছাপিয়ে সেগুলো বিক্রি করত। এখন ৩৫ কোটি বই ছাপানোর বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। আমাদের সেই আগের লোকবল সেটাপ নিয়েই এই বাড়তি লোডের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে অনেকেই রিটায়ার্ডমেন্টে চলে গেছেন, অনেক পোস্ট খালি আছে, এর মধ্যেই স্বল্পসংখ্যক লোক নিয়েই কিন্তু কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কোনো শুক্র-শনিবার নেই, প্রতিদিনই কাজ করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এনসিটিবিসহ এর সাথে বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় এক লাখ লোক জড়িত। এত বিশাল লোকের কর্মযজ্ঞ ম্যানেজ করার জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ থাকা দরকার। সেটা কিন্তু এনসিটিবিকে তৈরি করা হয়নি। 

বর্তমান সরকার ধারাবাহিক সাফল্য হিসেবে প্রায় এক যুগ ধরে নতুন বছরের শুরুতেই সারাদেশের শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতিবছর সরকারের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে। সেটি প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শিক্ষার একেবারে অপরিহার্য প্রধান উপকরণ কিন্তু বই। আর শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই তুলে দেওয়ার দায়িত্ব যেহেতু এনসিটিবির হাতে ন্যস্ত, তাই এ বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণে প্রস্তুতি পর্বেই সঙ্কট
Scroll to top