হাসান হামিদ
বাংলাদেশে কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিন হাসপাতালে করোনা রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই যে করোনা শনাক্ত বাড়ছে প্রতিদিন, একে বিশেষজ্ঞরা করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের শুরু হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশে টানা ৮০ দিন করোনার শনাক্ত একশয়ের নিচে ছিল। গত তিন দিন ধরে করোনা শনাক্ত একশয়ের বেশি হচ্ছে। পত্রিকায় দেখলাম, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১৬২ জনের শরীরে। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫৩ জনের। তবে এ সময় করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি। জানতে পেরেছি, এই পর্যায়ে ডেল্টা ও অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। সরকারের মন্ত্রীসহ বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে সংবাদ এসেছে। বিশেষজ্ঞরা সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও সবাইকে সচেতন থাকার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নমুনা পরীক্ষা করা হয় মোট ৪ হাজার ৫৫২ জনের। এই নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩ দশমিক শূন্য ৫৬ শতাংশ। এই হার আগের দিন ছিল ১ দশমিক শূন্য ৯১ শতাংশ। করোনা শনাক্ত এই রোগীদের মধ্যে ১৫৩ জন ঢাকার। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশের অন্য বিভাগগুলোতে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি।
টিকা কী পরিমাণ দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশে তা এই মুহুর্তের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ১২ই জুন পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৬ দশমিক ২২ শতাংশ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ ৭০ শতাংশ এবং বুস্টার ডোজ প্রায় ১৬ শতাংশ। প্রথম ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৮৮ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩ জন, দ্বিতীয় ডোজ ১১ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার ৬২৪ এবং বুস্টার ২ কোটি ৬৮ লাখ ৯১ হাজার ৭১৯ জন।
আমাদের দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সূত্র বলছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের একেবারে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৪০৫ জনের। এর মধ্যে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৪১৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১৩১ জনের। শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা লক্ষ করা গেছে। কোনো সময় বাড়ছিল, আবার কমে যাচ্ছিল। এভাবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে নিয়মিতভাবে রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার কমে যাচ্ছিল। ফলে তখন তুলে নেওয়া হয় করোনাকালীন সকল বিধিনিষেধ। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা একশ’র নিচেই ছিল। এখন আবার দ্রুত বাড়ছে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার।
তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও করোনা শনাক্ত দ্রুত বাড়ছে। ভারতে গত দুই সপ্তাহের তুলনায় গতকাল শনাক্ত বৃদ্ধির হার ১৯৯ শতাংশ আর পশ্চিমবঙ্গে বৃদ্ধির হার ২২৪ শতাংশ। এই দেশের সঙ্গে আমাদের চলাচল বেশি। তাছাড়া মানুষ এখন স্বাস্থ্যবিধি মানে না একেবারেই। বিশেষ করে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব আজকাল কেউ মানছেন না। আর টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর সাধারণত শরীরেই ৩ থেকে ৪ মাস ইমিউনিটি থাকে। আর বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ নেয়ার পর ইমিউনিটি থাকে ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত। করোনা বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের গত দুই বছরের যে চিত্র তাতে এটাই স্পষ্ট যে, সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাস পর পর নতুন একটি ঢেউ আসার সম্ভাবনা থাকে। সেই হিসাবে জুন মাসে করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হওয়া সেটাই প্রমাণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এরপর অবস্থা বোঝা যাবে। তবে আমাদেরকে এই বিষয়ে খুব সচেতন থাকতে হবে। আগের মত স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিত। সবাইকে আবার মাস্ক পরতে হবে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশে কোভিড কিছুটা বেড়েছে। কয়েক মাস আমরা দেখেছি দৈনিক ৩১ থেকে ৩৫ জন সংক্রমিত হতো। রোববার ১০৯ জন সংক্রমিত হয়েছে, সেই তুলনায় বেশ বেড়েছে। আমাদের সতর্ক হতে হবে, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। মাস্ক পরা ভুলে গেলে চলবে না, আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। কোভিড এখনো নির্মূল হয়নি, আছে। আমরা একটা স্বাভাবিক অবস্থায় আছি, আমরা যদি অস্বাভাবিক অবস্থায় না যাই, সে বিষয়ে সবার প্রচেষ্টা দরকার।